রোহিঙ্গাদের জন্য কানাডার কাছে টিকা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য কোভ্যাক্স হিউম্যানিটারিয়ান বাফারের সহ-সভাপতি কানাডা থেকে করোনাভাইরাসের টিকা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার (১১ আগস্ট) কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী কারিনা গোল্ডের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠকে কোভ্যাক্স থেকে টিকা চান ড. মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার মন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশ ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) থেকে রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। মূলত, চীন থেকে আনা সিনোফার্মের টিকা রোহিঙ্গাদের দেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য জানিয়ে কানাডার মন্ত্রীর কাছে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান ড. মোমেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য কানাডার অব্যাহত রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গাম্বিয়ার আইসিজে মামলায় আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গাম্বিয়াকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
এ সময় ড. মোমেন গোল্ডকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য করা বিশেষ সুবিধার কথা তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাসানচরে মানবিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কানাডার মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের উদারতার জন্য দেশটির প্রশংসা পুনর্ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু কানাডার বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকার উল্লেখ করে গোল্ড জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কিত কর্মসূচির জন্য কানাডা আগামী তিন বছরের জন্য ২৮৮ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দ করেছে। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুবিধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে গোল্ডকে ড. মোমেন জানান, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার সুবিধা দিতে চায়। তিনি বলেন, এজন্য ইউএনএইচসিআর মিয়ানমার থেকে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারে। যদি রাখাইন রাজ্যে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নাগরিকত্বের পথ জাতিসংঘ সেখানে আরও সম্পদ বিনিয়োগ করে বা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে এটি বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত করবে।
একইসঙ্গে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা এবং অন্যান্য অধিকারের অভাব মৌলবাদ ও চরমপন্থার দিকে পরিচালিত করতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ সংকটের সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এলডিসিএস (এলডিসি-৫) জাতিসংঘ সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ও কানাডার সহ-সভাপতিত্বের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. মোমেন কানাডিয়ান সরকারকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট করার জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য প্রবেশাধিকার বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
এ সময় ড. মোমন প্রত্যাশা করেন, কানাডায় অবস্থান করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নূর চৌধুরীকে সেখান থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
মুক্তা মাহমুদ