আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সেই জাপানি সাবেক স্বামীর লিগ্যাল নোটিশ

বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনে দুই শিশুর মা ও জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে এবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে তার সাবেক স্বামী শরিফ ইমরান। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ নোটিশ পাঠান তার সাবেক স্বামী।

এর আগে, বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দুই শিশু কতদিন মা-বাবার সাথে থাকতে পারবে তা আবারও ভাগ করে দেন। আদালত বলেন, চার রাত শুধু মা থাকবেন শিশুদের সঙ্গে। অন্যদিনগুলোতে মা-বাবা উভয়ে থাকতে পারবেন। তারা চাইলে শিশুদের নিয়ে বাইরে ঘুরতেও পারবেন।

জাপানি দুই শিশু কার কাছে থাকবেন এ নিয়ে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন চলছে বাবা ও মায়ের মধ্যে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার জন্য গুলশানের একটি ভাড়া বাসায় শিশুসহ দুজনকে থাকতে বলা হয়। চলতে থাকে সমঝোতার চেষ্টা। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
 
তাই আবারও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মা এরিকো। তার আবেদন তিনি একান্তে বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। সরাতে চান বাসায় লাগানো সিসি ক্যামেরা। শাস্তি চান তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা আপত্তিকর খবর ছড়িয়েছে তাদের।
 
সব শুনে চার দিন শুধু মায়ের কাছে থাকার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। বাকি দিনগুলো বাবা-মা উভয়ই থাকতে পারবেন। দুজনই পারবে শিশুদের নিয়ে বাইরে যেতে।
 
জাপানি মা এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমাদের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত  ৯,১১,১৩ ও ১৫ তারিখ এই চারটি রাতকে মায়ের জন্য সম্পূর্ণভাবে এক্সক্লুসিভ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি তার সন্তানদের সঙ্গে থাকবেন একা। আর অন্য রাতগুলোতে মা ও  বাবাও থাকবেন।  

তবে বাবা শরিফ ইমরানের আইনজীবীর অভিযোগ একই ছাদের নিচে থেকেও মা শিশুদের ঠিকমতো সময় দেননি। তিনি জানান, আবার যেন পারিবারিক কলহ না হয় তা পর্যবেক্ষণে লাগানো হয়েছিল সিসি ক্যামেরা।
 
আইনজীবী বলেন, এই রকম আদালতে যখন মামলাটা ঝুলে আছে সেই জায়গায় সিআইডির যে হস্তক্ষেপ সেটা কখনো আশা ছিল না। সব মিলিয়ে শিশু নিয়ে বাবা-মায়ের এই দ্বন্দ্ব অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
 
এদিকে জাপানি মাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ভিডিও সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে এসব ভিডিও তৈরির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও সাইবার টিমকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
 
এর আগে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জাপানি মা চিকিৎসকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির নাকানো এরিকোকে নিয়ে অপপ্রচার সংক্রান্ত সব উপাদান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেই সঙ্গে দুই কন্যাশিশুকে নিয়ে বেড়ানোর জন্য শপিংমলে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েও আবেদন করেছিলেন তিনি।

এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তার আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। গত ২১ জানুয়ারি ইমরান টোকিওর ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার এক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তবে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের আবেদন নাকচ করে।

পরবর্তী সময়ে স্কুলবাসে করে বাসায় ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। গত ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এরিকো ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। তবে এই আদেশ ভঙ্গ করে ইমরান শুধু একবার মায়ের সঙ্গে বড় দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি।

গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে বড় দুই মেয়ের জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে এরিকো এত দিন বাংলাদেশ আসতে পারেননি। ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এরিকো।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন