কুড়িগ্রামে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি ৩১ কোটি টাকা
ভুবন কুমার শীল, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে চলতি মৌসুমে পক্ষকাল ব্যাপী বন্যায় শুধুমাত্র কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১লাখ ৩৩ হাজার পাঁচশ’৭৯জন কৃষক। বন্যায় পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় মৎস বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুইশ’২৬জন মাছচাষী। ডুবে গেছে দু’শ ৯১টি পুকুর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনের। জেলায় এবার ২৬ হাজার চারশ পাঁচ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো। এতে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দুই হাজার সাতশ’৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২৫হাজার চারশ’ হেক্টর জমির ফসল।
বন্যার কারণে শাকসবজি চাষীরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার জলমগ্ন হয়ে এক হাজার একশ’৯৫ হেক্টর জমির সবজির মধ্যে ৬১ হেক্টর জমির শাক-সবজি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। অপরদিকে ৬৭ হেক্টর বীজতলা পচে চাষের অনুপযোগী হয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সদর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও উলিপুর উপজেলা।
সদর উপজেলায় সাতশ’৯২ হেক্টর, চিলমারীতে পাঁচশ’১৪ হেক্টর, নাগেশ্বরীতে চারশ’৯৫ হেক্টর, উলিপুরে তিনশ’৯৮ হেক্টর, রৌমারীতে তিনশ’ আট হেক্টর, চর রাজিবপুরে একশ’ ৬২ হেক্টর, ফুলবাড়ীতে একশ’২৫ হেক্টর, ভুরুঙ্গামারীতে একশ’২০ হেক্টর ও রাজারহাটে ১০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরফলে রোপা আমন চাষে এক লাখ তিনশ’৯০জন কৃষকের ২৯ কোটি ১১লাখ ৩৫ হাজার টাকা, চার হাজার চারশ’৯৫জন শাক-সবজি চাষীর এক কোটি ২২লাখ টাকা এবং ২৮হাজার ছয়শ’৯৪জন বীজতলা কৃষকের ৭০ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় ৪৪ দশমিক ৬০ হেক্টর আয়তনের দুশ’৯১টি পুকুর প্লাবিত হয়ে ৬৪ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুশ’৬২জন মাছ চাষী। টাকার অংকে ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১হাজার টাকা।
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা: আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন,এবারের বন্যায় গো-চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশুর কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীতে এই সমস্যা বেশি হয়েছে। সরকার ক্ষতির দিক বিবেচনা করে ৩১ লাখ ৪২ হাজার টাকার গো-খাদ্য প্রণোদনা দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। চর এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা স্থানীয় জাতের ধান ছিটিয়ে নতুন করে বপন শুরু করেছে। এছাড়াও সরকারিভাবে যে বীজতলা করে দেয়া হয়েছে, সেখান থেকেও কৃষক বীজ নিয়ে কাজে লাগাচ্ছে। তিনি আশাবাদ জানান, বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেছেন, এখন পর্যন্ত তিনশ’৭০ মে.টন চাল ও ২০ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য সহযোগিতায় ১০ লাখ ৬৪ হাজার টাকার উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৩৩৩ নম্বরে সহযোগিতার জন্য ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।