রাজশাহীতে টিকিট নিয়েও ট্রেনে উঠতে না পেরে শিক্ষার্থীদের ভাংচুর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষায় এবার শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছিল চরম পর্যায়ে। বিশেষ করে যানবাহনের ভোগান্তি ছিল বেশি। ভোগান্তি শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা শেষও হয় ভোগান্তি ও হয়রানি দিয়েই। তবে শেষ দিনের ভোগান্তি ছিল একেবারে ব্যতিক্রম। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বিকেল পড়ার পর পরই রেল স্টেশনে উপস্থিত হন। প্রায় শিক্ষার্থী অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছিলেন ট্রেনের। কিন্তু তারা আগে থেকেই ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও নিজ গন্তব্যে যেতে পারেনি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ট্রেনে নিজ গন্তব্যে যেতে না পারলেও চলে গেছে তাদের ব্যাগ, ব্যাগে থাকা মোবাইল ও কাগজপত্র। এ নিয়ে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা রেল স্টেশন ঘেরাও করে ভাংচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বিকেল চারটার পদ্মা ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। প্রায় দেড় হাজার অতিরিক্ত যাত্রী ইন্টারনেট টিকিট কাটেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা রেল স্টেশনে টিকিটের জন্য আসেন। অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট কাটার পর কাউন্টার থেকে টিকিট নেয়ার ভীড় করেন স্টেশনে। কিন্তু কাউন্টারে তাদের টিকিট দেয়া হবে এমনটি জানায় কর্মচারিরা। আবার অনেকেই আগেই টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট তুলে রেখেছিলেন। টিকিট না পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে চারটায় পদ্মা ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় যারা টিকিট পেয়েছেন তাদের অনেকেই পদ্মা এক্সপ্রেসে উঠে যান। যাদের হাতে টিকিট আছে তাদের সাথে যাদের টিকিট অনলাইনে কাটা আছে কিন্তু হাতে পাননি তারাও ট্রেনে উঠে যান। এসময় ট্রেনের নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের ট্রেনে উঠতে বাধা দেয়। এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ট্রেনের মধ্যে তাদের ব্যাগ ফেলে দিয়েছেন। অনেকেই সিটে বসে পড়েছেন। আবার অনেকেই উঠার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীদের ট্রেন থেকে ব্যাগপত্র ছাড়াই নামিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দিলেও তাদের ব্যাগ দেয়া হয়নি। ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে চলে যায়। এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা রেল স্টেশনের বিক্ষোভ ও কাউন্টারে ভাংচুর শুরু করে। এক পর্যায়ে টিসি অফিস ঘেরাও করে রাখে শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। পরে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুলিশের উপস্থিতির পরও ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মারমুখি অবস্থান নেন।
নাঈম নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি টিকিট কেটেছেন অনলাইনে। কাউন্টার থেকে টিকিট তুলেছেনও। চারটার দিকে তিনি পদ্মা এক্সপ্রেক্স টেনে উঠেন। কিন্তু গার্ডরা তাকে নামিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমার ব্যাগ রয়েছে ট্রেনের মধ্যে। বারবার ব্যাগ চাওয়া হয়েছে তাদের কাছে, তারপরও গার্ডরা আমার ব্যাগ দেয়নি। তিনি বলেন, সামনে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির এডমিট কার্ড রয়েছে ব্যাগে। এছাড়াও ব্যাগে রয়েছে মোবাইল। সেখানে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির দিন তারিখ ও ম্যাসেজ রয়েছে। এখন যদি মোবাইল না পাই তাহলে আমি অন্যান্য কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবো না। ট্রেনে ব্যাগ চলে যাওয়া এমন অনেক শিক্ষার্থী এধরনের অভিযোগ করেন। ইমন নামে শিক্ষার্থী জানান, আমাকে ট্রেন থেকে টেনে হেঁচড়ে নামানো হয়েছে। আমি বারবার অনুরোধ করেছি ব্যাগের জন্য। কিন্তু আমাকে ব্যাগ দেয়া হয়নি। আমার ব্যাগের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মোবাইল ও টাকা। এখন বাসায় যেতে হলেও টাকা লাগবে। কিন্তু আমি টাকা ছাড়া কিভাবে বাসায় যাবো। এমনকি বাসায় যোগযোগ করতে পারছি না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢাকায় যেনো নিরাপদে থাকে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে যারা ঢাকার যাত্রী নয় তাদের কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেনে ব্যাগ থেকে যাওয়া সকল যাত্রীর ব্যাগ যেনো নিরাপদে থাকে এবং তাদের কাছে পৌছে দেয়া যায় সেব্যবস্থা করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা পদ্মা ট্রনের টিকিটেই পরবর্তীতে ট্রেনে যেতে পারবে যাত্রীরা। এছাড়া খুলনা থেকে ঢাকা গামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ১০৬টি আসনের একটি নির্দিষ্ট কোচ লাগানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী গামী কমিউটার ট্রেনে গিয়ে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তারা ঐ কোচে ঢাকা যেতে পারবেন। তবে যাদের ব্যাগ ট্রেনে থেকে গেছে তাদের ওই ব্যাগের কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও কাগজপত্র নিরাপদে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।