ভাসানচরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো জাতিসংঘ, চুক্তি সই
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগ কাজ করছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে। এবার বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মধ্যে ভাসানচর সম্পর্কিত হওয়ার একটি সমঝোতা স্মারক সই হলো। এর ফলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রমের সুরক্ষা ও নীতিমালার একটি সার্বজনীন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলো।
শনিবার (৯ অক্টোবর) জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এ নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। শনিবার (৯ অক্টোম্বর) দুপুর ১২টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআরের কান্ট্রি ডিরেক্টর চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ইউএনএইচসিআর জানায়, এ সমঝোতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারের ও জনগণের উদারতা ও সহায়তা আবারও প্রতিফলিত হলো। পাশাপাশি এ দেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চালু রাখার প্রত্যয়ও আরেকবার ফুটে ওঠে।
ভাসানচর দ্বীপটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সেবা ও কার্যক্রমে সরকার ও জাতিসংঘের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করে সঙস্তাটি। এর আওতায় সুরক্ষা, শিক্ষা, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, জীবিকা ও স্বাস্থ্যসেবা বরাদ্দ। যার ফলে রোহিঙ্গারা দ্বীপে মানসম্মত জীবনযাপন করতে পারবে এবং ভবিষ্যতে মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে বলে মনে করে সংস্থাটি।
জাতিসংঘ কক্সবাজারে ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রয়োজন ও মতামত জানার জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং চলতি বছরের মার্চ মাসে দ্বীপটি পরিদর্শন করেছে জাতিসংঘের প্রতিনিধরা। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এবং সরকার ও বাংলাদেশি এনজিওগুলোর সঙ্গে এরকম আলোচনার মাধ্যমেই চালু থাকবে ভাসান চরের মানবিক ও সুরক্ষা কার্যক্রম।
সংস্থাটি আরও জানায়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য চলমান মানবিক কার্যক্রমের এ বছরের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে এখন পর্যন্ত অর্ধেকেরও কম অর্থায়ন হয়েছে। চলমান সহায়তা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জাতিসংঘ আহ্বান করছে। বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আকাঙ্ক্ষা নিরাপদে, স্বেচ্ছায়, মর্যাদার সঙ্গে ও টেকসইভাবে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সেই অগ্রাধিকার নিয়েই কাজ করছে। এটি যতদিন সম্ভব না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এ সহায়তা চলমান থাকবে।
এ বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘের সঙ্গে একটি খসড়া চুক্তি করে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল, আগস্টের শুরুতে চুক্তি চূড়ান্ত হলে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করবে জাতিসংঘ। তবে সময় ক্ষেপণ করে হলেও জাতিসংঘ সম্পৃক্ত হয়েছে ভাসানচরে।
জাতিসংঘ শুরু থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে আপত্তি করছিলো। কোভিডের এমন পরিস্থিতিতেও গেল বছরের ১৭ মার্চ তিন দিনের সফরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দেখতে যান জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। পরে তারা ভাসানচর নিয়ে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানান।
আর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের প্রথম দেখতে যায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি প্রতিনিধি দল। ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের দেখতে যান ঢাকায় নিযুক্ত ১০ বিদেশি রাষ্ট্রদূত। এসব কূটনীতিকরাও দাতাগোষ্ঠীর কাছে ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানান।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতেই ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ভাসানচর প্রস্তুত করে বাংলাদেশ সরকার। যা বছর দুয়েক আগেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানান্তর সম্ভব ছিলো না।
তবে গেল বছরের ডিসেম্বর থেকে জাতিসংঘের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তর করে বাংলাদেশ সরকার। এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মুক্তা মাহমুদ