আর্কাইভ থেকে অপরাধ

বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র, ছিনতাইকৃত অর্থ দিয়ে সংসার চালায়

ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাইকৃত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং সংসার চালায়। ওই চক্রের সদস্যদের বেশিরভাগেরই রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই। তারা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। ওই চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সবার বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে ওই চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়ায়।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। শুধু রাতেই নয়, দিনের আলোতেও সমান তালে ছিনতাই করে যাচ্ছে তারা। এই কাজে ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বেড়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও। অবশেষে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের ৩২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারী এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের বেশ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে র‌্যাব-৩ এই সাঁড়াশি অভিযান চালায়। এ সময় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাসহ মোট ৩২ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারকৃতদের তৎপরতা বাড়ে। সম্প্রতি উদযাপিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এবং একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

লে. কর্নেল আরিফ আরও বলেন, ছিনতাই চক্রের কিছু সদস্য রাজধানীর ফুটপাতে ঘোরাফেরা করতে থাকে। ওই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলিগলিতে ওঁৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণ কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না।

তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যেসব ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদের আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে এবং অনুসরণকৃত ব্যক্তির সাথে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। এক পর্যায়ে কথা বলতে বলতে ওই ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন সদস্য ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় এবং মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে এলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এই মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে।

এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদের টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে ওই ব্যক্তির পেছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের মূল হোতা মোহাব্বত মিয়া (৪০), মো. মাসুম (৩৫), ফজল খাঁ (৩২), মো. সাইফ (৩০), মো. আকাশ (২৪), মো. আবু বকর (২১), মো. নজরুল ইসলাম (৪০), মো. আলমগীর (২২), মো. জাহাঙ্গীর (২৮), মো. সোহেল (১৯), মো. সোহেল (৩২), মো. সোহানুর রহমান সাগর (২০), মো. মামুন (১৯), লিটন (২১), মো. আলমাস (২৮), সুজন মিয়া (২২), রাকিব (২৫), মো. রিপন (২২), মো. কালাম (৪০), মো. নজরুল ইসলাম (৪০), মো. সুমন মৃধা (২৬), অন্তর হোসেন রবিন (২৪), মো. আব্দুল রসুল (৩৮), মো. কবির (২৫), মো. ছামিদুল রহমান (৩৪), ইকবাল হোসেন (২০), কামরুল (২১), শহীদুল ইসলাম উজ্জল (২৬), মো. কালু (২০), মো. সুমন (২৫), মো. হৃদয় (১৯) ও মো. সাজিদ খান (১৯)।

ইতঃপূর্বেও র‌্যাব-৩ গ্রেপ্তার হয়ে সাজা ভোগ করে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ছিনতাই ও রাহাজানির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে আবারও যুক্ত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন