আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবাল সম্পর্কে জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কুমিল্লায় নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ওই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন (৩৫)। তিনি কুমিল্লার সুজানগর এলাকার বাসিন্দা।

এ ঘটনায় সংবাদমাধ্যমকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইকবাল দেশের বাইরে চলে যেতে সীমান্তে ঘোরাঘুরি করছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
ইকবাল এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। সে শুধু অবস্থান পরিবর্তন করছে। তা ছাড়া সে ফোন ব্যবহার করে না। তাকে তেমন কেউ চিনেও না। তাই সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা তাকে ধরে ফেলব।
 
এদিকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইকবাল হোসেনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। 
বুধবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তেই এটা সম্ভব হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। 

উল্লেখ্য, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পাওয়া পবিত্র কোরআন শরিফ সৌদি আরব থেকে আনা হতে পারে এমনটা জানিয়েছে পুলিশ। এ কোরআনের ছাপা, কাগজ ও ক্যালিগ্রাফির কাজ দেখে ধারণা করছে  সৌদি আরবে ছাপা হতে পারে। কোরআন শরিফটি ঘটনার আগের রাতেই আনা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা।
 
ঘটনার পর বুধবার(২০ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ, গাঢ় সবুজ রঙের ঐ কোরআন শরিফটি নিয়ে যায়। এটি এখন মামলার আলামত হিসেবে কোতোয়ালি থানায় জিম্মায় রাখো হয়েছে।  

পুলিশ এখন কোরআনটির পাতায় ও ওপরে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে সন্দেহভাজন আসামিদের হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখছে।
 
পুলিশ জানিয়েছে, রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা হয়। সে সময়ই সরিয়ে নেওয়া হয় হনুমানের হাতে থাকা গদা। গদা নিয়ে চলে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।  
 
ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ২টা ১০ মিনিটে দারোগাবাড়ির মসজিদ থেকে কিছু একটা হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন এক যুবক। তার গতিবিধি সন্দেহজনক।
 
এর এক ঘণ্টা ২ মিনিট পর আরেকটা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুমিল্লার নানুয়াদীঘি অস্থায়ী মণ্ডপের উত্তর-পূর্বদিকের রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন ওই ব্যক্তি। তার কাঁধে ছিল হনুমানের হাতে থাকা গদা। পুলিশ, পূজামণ্ডপ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনাটি ঘটে।
 
উল্লেখ্য, শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিন গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির উত্তরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন দেখা যায়। এরপর কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
 
এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করতে যাওয়া একটি দলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে নিহত হন চারজন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় নিহত হয়েছিলেন দু’জন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের আরো অনেক জায়গায় হিন্দুদের মন্দির-মণ্ডপসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে। 

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন