আর্কাইভ থেকে জাতীয়

একটি চলচ্চিত্র সমাজকেও বদলে দিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

একটি চলচ্চিত্র ব্যক্তির জীবন যেমন পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি একটি সমাজকেও বদলে দিতে পারে। আপনারা লক্ষ্য করবেন জীবন ধর্মী চলচ্চিত্র যখন নির্মাণ করা হয় সেগুলো কিন্তু মানুষকে সবথেকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ মানুষ তার জীবনের প্রতিচ্ছবিটা সেখান থেকে পায়। আবার একটা সিনেমা পারে মানুষের জীবন পাল্টে দিতে বা সমাজের চিত্রটা পাল্টে দিতে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনধর্মী সৃষ্টির গ্রহনযোগ্যতা সর্বত্র। সিনেমা, নাটক সবক্ষেত্রেই অবদান রাখে, মানুষের চিন্তা চেতনার আরো উৎকর্ষতা ঘটাতে পারে এবং মানুষকে অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে।

তিনি বলেন, যারা আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিক, যারা সাহিত্য রচনা করেন এবং যাদের রচনার ওপর ভিত্তি করেই সিনেমা হয় তারাও যদি এরকম জীবনধর্মী রচনা তৈরী করেন, নাটক তৈরী করেন বা সাহিত্য তৈরি করেন আর তার ওপর ভিত্তি করে যদি সিনেমাগুলো হয় সেটা আমাদের সমাজটাকে অরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, উন্নত করতে চাচ্ছে, মানুষের জীবন মান উন্নত করতে চাচ্ছে, মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে- সেই সুযোগটা এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজেও আগামী বাজেটে উদ্যোগ নেবেন এই অনুদানটা বাড়িয়ে দেওয়ার। কেননা বরাদ্দ ভালো থাকলে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সকলের মাঝে মেধা আছে, চিন্তা শক্তি আছে এবং শৈল্পিক মনভাবটা আছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি দারুণভাবে বেড়েছে। সেখানে সরকার যে অনুদান দিচ্ছে, এটা একটা পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যথেষ্ট নয়। এই অনুদান আরও বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাদের কিছু চলচ্চিত্র হয়েছে যেগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং দেশের মানুষও সেগুলো লুফে নিয়েছে এবং দেশের সীমানা পেরিয়ে বাইরেও সেগুলো চাহিদা পেয়েছে। কাজেই সেভাবেই আমাদের কাজ করা দরকার।

তিনি কষ্ট করে দেশের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ায় কলা-কুশলী সহ সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি এফডিসিতে কমপ্লেক্স তৈরীর কাজের ধীরগতিতে উষ্মা প্রকাশ করেন এবং কাজ দ্রুত শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

গাজীপুরে নির্মাণাধীন ফিল্মসিটি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সুযোগ সুবিধা -সম্পন্ন করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার ফিল্ম আর্কাইভ এবং ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট করে দিয়েছে। এখন প্রশিক্ষণটা জরুরী।

তিনি বলেন, সরকার যাতে ভবিষ্যতে সার্টিফিকেশন পদক্ষেপটা আইনগত ভাবে নিতে পারে সেজন্য ব্যবস্থাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় ছিল অশ্লীল সিনেমা, মারদাঙ্গা বা শুধু অনুকরণ করা। সেগুলো না করে ভালো জিনিসটা শিক্ষা নেওয়া আর মন্দ জিনিসটাকে পরিহার করা দরকার। সমাজের জন্য কোনটা ভালো সেটা বিবেচনায় আনা। যখনই চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন সে বিষয়টা দেখবেন। এমন সিনেমা দরকার বাবা-মা, ভাই-বোন, সবাই মিলে যাতে দেখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় অনেকে কথা বলে, টকশো হয়, সারাদিন অনেক কথা। অনেক কথা বলার পরে কেউ কেউ বলবে আমরা কথা বলতে পারি না। অথচ বাংলাদেশে এখন ২৪৫৫ টি পত্রিকা, ১৭০ টি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, ১৪টি আইপি টিভি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে সবাইতো মন ভরে কথা বলছে। কথা বলতে পারলো না টা কোথায়। কে মুখটা বন্ধ করলো আমি জানি না।

তিনি বলেন, তার সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপনের আগে বিদেশী মুদ্রায় স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে হোত। আর সরকার এখন দ্বিতীয় স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপনের ব্যবস্থা নিচ্ছে যাতে করে আবহাওয়ার তথ্য প্রাপ্তি এবং সম্প্রচারে আরো উৎকর্ষতা আসে। কেননা তাঁর সরকার চায় এই শিল্পটা যেন সবসময় চালু থাকে, ভাল এবং উন্নতমানের থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ এর ৩৪টি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর বক্তব্য রাখেন।

চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় এ বছর যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন  অভিনেত্রী ডলি  জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যৌথভাবে লাল মোরগের ঝুঁটি ও নোনাজলের কাব্য, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধর’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র কাওসার চৌধুরীর (বধ্যভূমিতে একদিন), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য) পুরস্কার লাভ করেছে।

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে চিত্রায়িত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রটি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ সম্মাননা লাভ করে।

শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে যৌথভাবে মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল); শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য); পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ)এবং  শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি) পুরস্কার লাভ করেছে।

শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়) পুরস্কার লাভ করেছে।

গানের জগতে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে. এম. আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ) পুরস্কার লাভ করেছে।

এছাড়া, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগত-সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান দলগত- মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি) পুরস্কার লাভ করেছে।

https://youtu.be/Q8Pn4IXYR-A

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন