আর্কাইভ থেকে জাতীয়

ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে থাইল্যান্ডকে পাশে চায় ঢাকা

ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বিশেষ করে, প্রতিবেশী ভারতের সহযোগিতা চেয়েছিল বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় এ মহাসড়কে যুক্ত হতে নতুন করে থাইল্যান্ডকে পাশে চাইবে ঢাকা।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের তৃতীয় সভা ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ বসবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড। সভায় ঢাকার পক্ষ থেকে কানেক্টিভি ইস্যুতে তোলা হবে ত্রিদেশীয় মহাসড়কে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি। একইসঙ্গে ঢাকা-ব্যাংককের মধ্যে কোস্টাল শিপিং চালুর বিষয়েও জোর দেবে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া এফওসিতে আলোচনার টেবিলে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, কৃষি খাতে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আন্ত:দেশীয় অপরাধ, মানবপাচার, মাদক চোরাচালানের মতো বিষয়গুলোতেও একে অপরের সহযোগিতা চাইতে পারে দুই দেশ।

ঢাকার পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে ব্যাংককের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি সারুন চারোয়েনসুওয়ান। বাণিজ্য-বিনিয়োগ থাইল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি দেশটির কাছ থেকে বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। এটাকে কিভাবে বাড়ানো যায়, সেটি আমাদের লক্ষ্য।

বাংলাদেশে থাই বিনিয়োগ আরও আনতে চান জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, থাই একটা বিনিয়োগ আছে দেশে। তাদের সঙ্গে কিন্তু আমাদের বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে। বাংলাদেশে থাই বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জানা গেছে, ঢাকায় সোমবার (১৩ মার্চ) তিন দিনব্যাপী শেষ হতে যাওয়া বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে থাই একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে প্রতিনিধিদলটির। থাইল্যান্ডের যেসব খাতের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছেন তারা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায়, তা নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে আইডিয়া শেয়ার করবেন। কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি বাড়াতে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এবার এফওসিতে বিষয়টি আবার তুলবে ঢাকা। পাশাপাশি ঢাকা-ব্যাংককের মধ্যে কোস্টাল শিপিং চালুর বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে চায় উভয়পক্ষ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসবে। এ মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ভারত সফরে যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ বিষয়টি থাইল্যান্ডের সঙ্গে আগেও তুলেছিলাম, এবারও গুরুত্ব সহকারে তুলব। কানেক্টিভটির ভিউ থেকে এটা ফোকাসে থাকবে।

ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে তাও উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা। তার ভাষায়, ‘এটাতে যুক্ত হতে পারলে আসিয়ানের একটা এক্সেস পাওয়া যাবে। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়বে, বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়বে, সংস্কৃতির বিনিময় হবে।’

কোস্টাল শিপিং চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের সঙ্গে কোস্টাল শিপিং নিয়ে একটা সাইন হয়েছে। এটাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। অ্যাগ্রো বিজনেস অ্যাগ্রো বিজনেস খাতে থাইল্যান্ডের সুনাম রয়েছে। এ খাতে বাংলাদেশ থাই সহযোগিতা চায়। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষি খাতে বিশেষ করে, অ্যাগ্রো বিজনেস ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষতা রয়েছে থাইল্যান্ডের। আমরা তাদের বলেছি, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাগ্রো প্রসেসিং প্যাকেজিং; এ সমস্ত বিষয়ে তাদের সহায়তা লাগবে। এ খাতে যেসব সম্ভবনা আছে, সেখানে থাই বিনিয়োগ চাই আমরা। এ বিষয়গুলো আলোচনায় থাকবে। অন্যান্য বিষয় দ্বিপাক্ষিক সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হতে যাওয়া পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় থাকবে। আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ডকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অনুরোধ করবে ঢাকা। একইসঙ্গে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনারশিপ পেতে থাইল্যান্ডকে পাশে চাইবে ঢাকা।

আলোচনায় অন্য কোন কোন বিষয়গুলো থাকবে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু বিষয় থাকবে যেগুলো মূল ফোকাসে থাকবে। এর বাইরে প্রতিনিয়ত যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে- প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আন্ত:দেশীয় অপরাধ, মানবপাচার, মাদক চোরাচালানের বিষয় নিয়ে কথা হবে। এসব বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যেন আরও সহযোগিতা বাড়ানো যায়, যেন অপরাধগুলো মিউচ্যুয়ালি ঠেকানো যায়।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে ব‌লেন, আমরা বি‌ভিন্ন দে‌শের জন‌্য নিয়‌মিত ফরেন অফিস কনসালটেশন কর‌ছি। এতে দ্বিপা‌ক্ষিক সব বিষ‌য়ে আলোচনার সু‌যোগ হয়, কো‌নো সমস‌্যা থাক‌লে তা ডায়াল‌গের মাধ‌্যমে সমাধান করা যায়। থাইল‌্যান্ড আমা‌দের বন্ধু দেশ, তা‌দের স‌ঙ্গে আমা‌দের খুব ভা‌লো সম্পর্ক। আমরা বাংলা‌দে‌শে আরও থাই বি‌নি‌য়োগ চাই, ট্রেড বাড়া‌তে চাই, কা‌নে‌ক্টি‌ভি‌টি চাই; রো‌হিঙ্গা‌দের প্রত‌্যাবাস‌নে আসিয়া‌নের সবার সহ‌যো‌গিতা চাই।

উল্লেখ্য, গেলো বছরের মার্চে ব্যাংককে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন