আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

এখনও সেমির পথ খুঁজছে বাংলাদেশ

শিরোনামটি পড়ে যে কারোর-ই মন ভালো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতায় বিশ্ব আসরে একেবারেই বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। তারপরও কথায় আছে, আশায় বাঁচে মানুষ। সেই আশার পালে আরেকবার ঢেউ তুলতে মরিয়া মাহমুদউল্লাহ’র দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাগজে-কলমে এখনও সেমির পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে বিশাল ব্যাবধানে জয়ী হতে হবে টাইগারদের।

আবুধাবিতে দু’দলের খেলা শুরু বিকেল চারটায়। আজ জিততে হবে কমপক্ষে ৮ উইকেটে। আর রানের দিক হলে কমপেক্ষ ১০০ রানে হারাতে হবে সাউথ আফ্রিকাকে। এটা অনেকটাই অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো। এরপরও আশাবাদী টাইগারদের দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ঘাম ঝড়িয়ে সুপার টুয়েলভে উঠার পরও টানা তিনটি হার।

 

কঠিন এই বাস্তবতা মাথায় নিয়ে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য অবশ্যই জয়। তার চেয়েও বড় লক্ষ্য নিজেদের প্রমাণ করা। মুশফিক-মুস্তাফিজদের এটা করে দেখানোর সময় যে, তারা, আফগানিস্তান কিংবা স্কটল্যান্ডের চেয়ে তারা খারাপ কোনো দল নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যাগ এ্যান্ড ব্যাগেজ প্রস্তুত বাড়ির পথের অপেক্ষায়।

আজ কাঙ্খিত জয় না পেলে আগামী ৪ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিয়ম রক্ষার ম্যাচে খেলে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ দল। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকা দলটি বিশ্ব আসেরর মূল পর্বে প্রথম জয়ের খোঁজে আজ মাঠে নামছে। যেখানে বড় ধাক্কা সাকিব আল হাসানের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি। তাঁর জায়গায় আজ মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) একাদশে দেখা যাবে শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে। অনুর্ধ্ব-১৯ ব্শ্বিকাপ খেলা এই ব্যাটারের আজই বিশ্বকাপ অভিষেক হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।

ইনজুরির কারণে আগে থেকেই দলে নেই, পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অনুশীলনে পাওয়া চোট থেকে পুরোপুরি ফিট নন উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও তিনি দলে ফিরছেন না। তাই গ্লাভস হাতে দাঁড়াচ্ছেন লিটন কুমার দাস। বিশ্বকাপের শুরুতে সাকিব ও সাইফসহ নয় ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। ‘সাকিব না থাকা অবশ্যই দলের জন্য বড় ধাক্কা। তিনি না খেললে দলে একজন বোলার বা ব্যাটারের ঘাটতি হয়। এটা দলের ভারসাম্যের জন্য তাই বড় ক্ষতি। পাশাপাশি,চাপের সময়ে তার সাপোর্ট, সেটিও পাওয়া যাবে না। তবে এটাই হয়তো সুযোগ করে দিচ্ছে নতুন কাউকে বিশ্বকাপে প্রথমবার মাঠে নামার। তরুণ একজন ক্রিকেটারের জন্য সেটি হবে ইতিবাচক দিক কিংবা সুযোগ।

কোচ ডোমিঙ্গো বলেছেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) ম্যাচ খেলার মতো ফিট হবে না সোহান। শামীম ও সৌম্য সরকার, আমাদের দুই ব্যাকআপ ব্যাটসম্যান, থাকবে একাদশে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাইফের জায়গায় পেসার শরিফুল ইসলামকে খেলানো হয়। ব্যাটিংয়ে গভীরতা ধরে রাখতে এবার ব্যাটসম্যান বাড়াচ্ছেন কোচ। পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌম্য ও লিটন আজও সুযোগ পাচ্ছেন ওপেনিংয়ের। বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলে সৌম্যর রান ৫ ও ১৭। লিটন প্রথম ৫ ম্যাচ মিলিয়ে ৬৫ রান করার পর গত ম্যাচে (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) তিন নম্বরে নেমে করেন ৪৪ রান। তবে শেষ সময়ে আউট হওয়ার হতাশায় পুড়তে হয় তাকে। এক কথায় গোটা বাংলাদেশকে।

আজ টানা তিন হারের বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘এখনও অনেক কিছু পাওয়ার আছে। সেমির আশা হয়তো কিছুটা ক্ষীণ। কিন্তু এখনো দু’টি ম্যাচ আছে। আমরা যদি বাকি দু’টোও জিততে পারি, দলের জন্য ভালো কিছু হবে। মরিয়া হয়েই চেষ্টা করছি সবাই মিলে। মাঠে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করছি।’

সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট দল

সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এরপর ইংল্যান্ডের কাছে হারে ৮ উইকেটে। তবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ রানে হার ছিলো হৃদয়বিদারক। শ্রীলঙ্কা ও উইন্ডিজকে হারাতে পারলে সেমির দৌড়ে দারুণভাবে থাকতো টাইগাররা। গাণিতিকভাবে বাংলাদেশে শেষ চারে ওঠার সুযোগ এখনও সম্ভব। কিন্তু এ জন্য একসাথে অনেক কিছু ঘটতে হবে, যার অনেক কিছুই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বড় কর্তার সব কথায় এতদিন যারা সায় দিতেন, সামনে মাথা নোয়াতেন, সেই তারাও মনে করছেন, নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

এদিকে, টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে দু’টি করে জয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আবার ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে অজিরা।

গ্রুপ ওয়ান-এর পারফম্যান্সের বিচারে ইংল্যান্ড ভয়ঙ্কর দল, যেমনটা গ্রুপ টুতে পাকিস্তান। এমন অবস্থায় গ্রুপ ওয়ান থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমির দৌড়ে টিকে থাকতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে চাইবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছয় বারের লড়াইয়ে সবগুলোতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে মাত্র একবার। ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপে স্বাগতিক প্রোটিয়ার বিপক্ষে কেপটাউনে ৭ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ১৪ বছর পর আবারো দু’দলের সাক্ষাত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ মঞ্চে।

সব আয়োজনের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে বাংলাদেশ এবং সাউথ আফ্রিকা ১১৮ ম্যাচ খেলেছে। এরমধ্যে টাইগাররা জিতেছে ৪৩টি ম্যাচে। আর হেরেছে ৭৩ বার। পরিত্যক্ত হয়েছে দু’টি ম্যাচ।।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন