আর্কাইভ থেকে ফিচার

লন্ঠণ জ্বালিয়ে রমজানকে স্বাগত জানায় যে দেশ

আমাদের দেশের মতোই কাকতালীয়ভাবে এশিয়ার আরেকটি দেশে সাহরির সময় ঢোল বাজিয়ে ঘুম থেকে জাগানো হয়। তবে তারা এটি বহুকাল আগে থেকেই করে আসছে, বলা যায় তারাই সর্বপ্রধম এটি চালু করে। উসমানীয় শাসনামলে কোনো ঘড়ি বা এলার্ম সিস্টেম ছিল না। তখন থেকেই তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। ঢোলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাব-গম্ভীর গান গায় এই বাদক দল। মাসব্যাপী এই সেবা দিয়ে ঈদের আগে পাড়া-মহল্লা থেকে ঈদের বখশিশ সংগ্রহ করে তারা।

তাদের আরেকটি ঐতিহ্য হলো কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় ঘোষণা করা। অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে মিসর ও সুদানের স্বঘোষিত খতিব মোহাম্মদ আলী পাশা  সেনাবাহিনীর জন্য কিছু কামান সংগ্রহ করেন। একদিন দুর্ঘটনাবশত কাকতালীয়ভাবে ইফতারের সময় শুরুর সঙ্গে সঙ্গে একটি কামান থেকে গোলা বিস্ফোরিত হয়। তথাপি তারা ধরে নেয় খতিব মোহাম্মদ আলীর আদেশে কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। সেই থেকে অদ্যাবধি ইফতারের সময় কামান দাগানো হয়, যা স্বচক্ষে বা টেলিভিশনে উপভোগ করে ঐ দেশের সাধারন জনগন। বলছিলাম ইসলামী জগতের প্রসিদ্ধ দেশ মিশরের কথা।

নানা ইতিহাস, ঐতিহ্যে নবী রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম, আলেম উলামা সুফীদের পদচারণায় অতীত কাল থেকেই সমৃদ্ধ মিশর । মিশরে রমজান প্রধানতম মাস, ইবাদতের মাস, উৎসবের মাস, দান সাদকাহর মাস, কুরআন তিলাওয়াতের মাস। শাবান মাস থেকেই মিশরে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়। রমজানের আগে মিশরে আলোকসজ্জা করা হয়। পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানো মিশরে রমাদ্বান লন্ঠন সারাবিশ্ব জুড়ে বিখ্যাত। অন্ধকার দূর করে আলোকিত পথে তাকে মসজিদে নেওয়ার জন্য তৎকালীন মিসরবাসী মোমবাতিসহ নানা ধরনের প্রদীপ প্রজ্বলন করে। সেই মোমবাতি বাতাসে যেন না নিভে সেজন্য কাঠের তৈরি এক ধরনের বাক্স বা খাঁচার ভেতর রাখা হয়েছিল এসব মোমবাতি ও প্রদীপ। তখন থেকেই প্রদীপের এই উৎসবমুখর ব্যবহার শুরু হয়। এগুলো ‘ফানুস’ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মিসর, সিরিয়া ও তৎকালীন মেসোপেটোমিয়ার শাসক এবং মুসলিম বীর আন নাসির সালাহ আমদিন ইউসুফ বিন আইয়ুব ওরফে গাজী সালাউদ্দিনের সময় এই লণ্ঠন বা ফানুস ব্যাপক জনপ্রিয়তা প্রায়। রমজান শুরুর আগেই মিসরের ঘাট-বাজারে ছোট-বড় নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। উজ্জ্বল ও গাঢ় রংয়ের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় এসব লণ্ঠনে। মনের আনন্দে এসব লণ্ঠন কিনে দোকান-মাঠ-মিল-কারখানা বাসা-বাড়ি সাজায় মিশরীয়রা।  এ সময় শিশুদেরও বায়না থাকে নিত্যনতুন রঙিন লণ্ঠন কেনার জন্য। হাতে লণ্ঠন নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়, গান গায় আর বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করে।

বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের ফলে কাঠের বদলে লোহা, তামা ও অন্যান্য ধারক দ্রব্য, কাচ ও স্বচ্ছ প্লাস্টিক শিটের ব্যবহার করে আধুনিক লণ্ঠন নির্মাণ করা হয়। ফাতেমীয় আমলে রমজান মাসে রাস্তা আলোকিত করার প্রচলনের ধারাবাহিকতায় এখনো মিসরের রাস্তায় লণ্ঠন দিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়।

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন