আর্কাইভ থেকে ফিচার

যে দেশে ইফতার যেন আরেক উৎসব!

রমজান মাসে বিশ্বের প্রায় সবখানেই বেশ ঘটা করে ইফতারের আয়োজন করার চল রয়েছে মুসলিমদের মধ্যে। রমজান মাসে সারাদিন সিয়াম সাধনার পর রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়।

এ আনন্দ থেকে পিছিয়ে নেই ইন্দোনেশিয়াও।

২৬ কোটিরও বেশি জনঅধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া। যার ৯০ শতাংশই মুসলমান। তবে সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়া  ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা করা হয়। যার শুরু হয় মূলত মাহে রমজানের চাঁদ দেখার আগে থেকেই।

সকাল-সন্ধ্যায় চার লাখেরবেশি মসজিদ থেকে সমস্বরে মুখরিত হয় আল্লাহর একত্ববাদের ডাক, রেসালাতের পয়গাম।

মুসলমানদের মহিমান্বিত মাস রমজানে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ আছে দেশটিতে। রোজা রাখা, ইফতারের পর তারাবিহর নামাজ পড়া ছাড়াও আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠে ইন্দোনেশিয়ানরা।

রহমতের মাসের চাঁদ ওঠার সংবাদ প্রচার হতেই মসজিদের পাশে কোনো খোলা জায়গায় বিশাল ড্রাম বাজিয়ে পরস্পরকে অভিনন্দন জানান তারা।

ইন্দোনেশিয়ার মানুষের কাছে ইফতার যেন আরেক উৎসব। বেদুক বাজানোর মাধ্যমে ইফতারের সময় নিশ্চিত করা হয় দেশটিতে। ইফতারকে তারা বলে বুকা পুয়াসা।

এখানে শিক্ষার হার অনেক বেশী এবং খাবার দাবার নিয়ে তারা যথেষ্ট সচেতন।

ইন্দোনেশিয়ান ইফতারে থাকে হরেক রকম ফল এবং ফলের রস থেকে তৈরি শরবত। বিভিন্ন ধরনের ফলের ককটেলও থাকে। পাশাপাশি থাকে যেকোন ধরনের পরিজ। আরও থাকে মেন্দোয়ান। এটা অনেকটা দেখতে পিয়াজুর মত ভাজা আইটেম। ডাবের পানি ইন্দোনেশিয়ানদের প্রিয় খাবার।

একটু ভারী খাবারের মধ্যে থাকে কিস্যাক, যা সিদ্ধ চাউল দিয়ে তৈরি খাবার। থাকে পাকাথ-বা সবজি জাতীয় খাবার। সাথে থাকে ‘সাতে সুসু’। এটা গরুর মাংসের তৈরি করা হয়।

এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার মানুষ রেনডাং খেতে বেশ পছন্দ করে। অনেকের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার রেনডাং। নারিকেলের দুধ দিয়ে হালকা আঁচে রান্না করা গরুর মাংসকে রেনডাং বলে। রান্নার সময় হলুদ, রসুন, লেমনগ্রাস, আদা, মরিচ ও ইন্দোনেশিয়ান হার্ব গালানজাল ব্যবহার করা হয়। প্রায় কয়েক ঘণ্টা স্টিউ করার পর এই খাবারের স্বাদ অন্য রকম হয়ে যায়।

ইন্দোনেশিয়ার আনুষ্ঠানিক জাতীয় খাবার হচ্ছে টুমপেং। ইন্দোনেশিয় খাবার যেমন সাটে, গরুর মাংসের রেন্ড্যাং, এবং স্যাম্বাল জনপ্রিয়। সোয়ে-ভিত্তিক পদ যেমন টফু ও টেমপেও খুব জনপ্রিয়।

রমজান মাসে ইবাদত, বন্দেগি ও কল্যাণমূলক কাজে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের প্রতিযোগিতা চোখে পড়ার মতো। বড় বড় শহরে বসবাসকারী মুসলিমরা প্রায়ই রমজান মাসে, বিশেষ করে শেষের দিকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। রমজান মাসের শেষে শ্রমিকদের দেয়া হয় এক মাসের বেতনের সমান বিশেষ বোনাসের টাকা। ইন্দোনেশীয়রা একে ‘তের নম্বর মাসের’বোনাস বলে থাকেন। ধনী থেকে মধ্যবিত্ত অনেকেই এ মাসে জাকাতের পাশাপাশি বাড়তি দান-খয়রাত করেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন