আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

দুই গ্রুপের গোলাগুলি, গ্রাম ছেড়েছে ১৭২ পরিবার

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছেন প্রায় ১৫০টি পরিবারের ২০০ মানুষ। রোয়াংছড়ি সদরে এসে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। আর খামতামপাড়ার পার্শ্ববর্তী রুমা উপজেলার অংশে ২২টি পরিবার উপজেলা সদরের বম কমিউনিটি হল রুমে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাতে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-সংস্কার) সদস্যদের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। পরের দিন শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে সেখানে জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত আটজনের মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। পরে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

পুলিশ বলছে, পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কেএনএ এবং ইউপিডিএফ-সংস্কারের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। কেএনএ ‘ভা তে কুকি’ নামে একটি ফেসবুক আইডিতে নিহতদের এনআইডি কার্ড পোস্ট করে দাবি করেছে, তাদের সাত সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত সাত সদস্য হলেন- ভান দুহ বম, সাং খুম বম, সান ফির থাং বম, বয় রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান ঙাক বম ও লাল ঠা জার বম। তারা সবাই খামতাংপাড়ার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে তারা নিহত আরেকজনের পরিচয় দিতে পারেনি।

এদিকে গোলাগুলিতে ৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রাম ছেড়ে ১৫০টি পরিবার রোয়াংছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ২২ পরিবার রুমা উপজেলা রুমা বম অ্যাসোশিয়েশনের ভবনে আশ্রয় নেয়।

রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া খামতাম পাড়ার বাসিন্দা ক্য সৈপ্রু জানান, গত কয়েক মাস যাবৎ তাদের এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিরাজ করছে। গতকাল রাতের গোলাগুলি এবং সকালে মরদেহ দেখে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন রক্ষা করতে পালিয়ে চলে এসেছেন।

রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, ঘটনাস্থল এলাকা এবং এর পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে ১৫০টি পরিবার মানুষ আতঙ্কে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওদের গ্রামে ফেরত পাঠানো হবে।

বান্দরবান সেনা জোনের আওতাধীন রোয়াংছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন খন্দকার ফাহিম মাহমুদ বলেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং খামতাংপাড়া এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পালিয়ে আসা পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে রাখবো। পরবর্তীতে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের নিজ গ্রামে হস্তান্তর করবো।

এ বিষয়ে রুমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা বলেন, ঘটনাস্থলটি রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে পড়েছে। আমি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গোলাগুলির ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে রুমাতে আসা ২২টি পরিবার এখন উপজেলার বাম কমিউনিটি হলে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের খোঁজখবর রাখছি।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর খামতাংপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গোলাগুলি ঘটনায় নিহত ৮ জনের ময়নাতদন্ত চলছে বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন