পানিতে ডুবে মৃত্যু: গত ১০ মাসে ১২৪৯ জন
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর) ৯১৭টি ঘটনায় পানিতে ডুবে এক হাজার ২৪৯ জন মারা যান। এর মধ্যে এক হাজার ১২২ জন পানিতে ডুবে এবং ১২৭ জন নৌযান দুর্ঘটনায় ডুবে বা আহত হয়ে মারা যায়। যাদের ৮৪ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম।
তবে এসময়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর এ সংখ্যা দেশের যে কোনো জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম জেলায়। পানিতে ডুবে চট্টগ্রামে অন্তত ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর একইসময়ে সবচেয়ে কম শরীয়তপুরে ৪ জন মারা গেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টির তৈরি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ১০ মাসে চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৫৭ জনের মধ্যে ৪৭ জনের বয়স নয় বছরের কম। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে এসব শিশুরা পানির সংস্পর্শে গিয়ে মারা যায়। তাদের মধ্যে ১৩ জন কন্যাশিশু ও ৩৪ জন ছেলেশিশু রয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করে সমষ্টি। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সারাদেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
এতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম ছাড়াও এসময়ে আরও ১৩টি জেলায় জেলাপ্রতি অন্তত ৩০ জন বা তার বেশি সংখ্যক মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৫২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫১ জন, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহে ৪৮ জন, নোয়াখালীতে ৪১ জন এবং চাঁদপুরে ৩৯ জন রয়েছেন। গত ১০ মাসে পানিতে ডুবে সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে শরীয়তপুর জেলায়। এ জেলায় মারা গেছেন চারজন। এছাড়া একইসময়ে তুলনামূলক কম মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে নড়াইল, মাগুরা, বান্দরবান, রাজবাড়ী ও খুলনা জেলাগুলো। এসব জেলায় জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলাপ্রতি মৃত্যু ছিল ২ থেকে ৫ জনের মধ্যে।
সমষ্টির বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, গত ১০ মাসে ৯১৭টি ঘটনায় পানিতে ডুবে এক হাজার ২৪৯ জন মারা যান। এর মধ্যে এক হাজার ১২২ জন পানিতে ডুবে এবং ১২৭ জন নৌযান দুর্ঘটনায় ডুবে বা আহত হয়ে মারা যায়। যাদের ৮৪ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। মোট মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে চার বছর বা তারও কম বয়সীর সংখ্যা সবচয়ে বেশি, ৫৩৮ জন। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৩৬৪ জন, ১০ থেকে ১৪ বছরের ১০৩ জন এবং ১৫ থেকে ১৮ বছরের ৩৯ জন। ২০৫ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ৭৯ শতাংশ ঘটনা দিনের বেলায় জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনের বেলায় শিশুরা পানির সংস্পর্শে বেশি যায়। ১০ মাসে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৫০৬ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৪৫৪ জন মারা যায়। তবে রাতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা বা রাতে ২৮৯ জনের মৃত্যু হয়।
বর্ষাকাল ও এর আগে-পরের (জুন-অক্টোবর) মাসগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালে পানিতে ডুবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২১০ জন মারা যায় আগস্ট মাসে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল জুলাই মাসে ১৫৭ জন। তবে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসেই শতাধিক মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় বলে জানায় সমষ্টি।
সরকার এরইমধ্যে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টিকে ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার ও দাতা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি জেলায় কিছু কিছু কাজ হচ্ছে। শিশু সুরক্ষার জন্য দেশব্যাপী এসব কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ বিষয়ে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রণয়ন হয়েছে। এটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এস