আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে ইংলিশদের হারিয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের  দুঃসহ স্মৃতি ম্যাচের আগে বেশ তাড়া করছিল। শঙ্কায় ছিল আবার না শোকাগ্রস্ত হতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। অবশেষে শোককে শক্তিতে পরিণত করে শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে ইংলিশদের হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করলো কিউইরা। এখন অপেক্ষা দ্বিতীয় দলের। অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল বিজয়ীর সঙ্গে আগামী রোববার দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে মুখোমুখি হবে কিউইরা। 

আইসিসি ইভেন্টের নকআউট, ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি। চর্চা হচ্ছিল সেই ফাইনালের, অবধারিতভাবেই। সেই ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের। ক্রিকেট রূপকথায় ঢুকে যাওয়া ইয়ান স্মিথের সেই ‘বেয়ারেস্ট অফ অল মার্জিন’ কথামালা, জিমি নিশামের আক্ষেপভরা ‘ক্রিকেটে এসো না’ খ্যাত সেই টুইট, কিংবা বেন স্টোকস বীরত্বের সেই ফাইনালের। 

তবে সেবারের সঙ্গে এবারের বেশ অমিল, সেবার শেষ হাসি হেসেছিল ইংল্যান্ড, আর এবার নিউজিল্যান্ড। সেবার আফসোসে পোড়া নিশামই এবারের নায়ক। ১১ বলে ২৭ রানের ক্যামিওই যে ব্ল্যাক ক্যাপসকে ফিরিয়ে এনেছে কক্ষপথে। যার হাত ধরেই ইংলিশদের ৫ উইকেটে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড চলে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে! নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো!

আবুধাবি শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম থেকে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের দূরত্বটা ১১৬ কিলোমিটারের এদিক ওদিক। কিন্তু নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের জন্য তখন সে দূরত্বটা ছিল ২৪ বলে ৫৭ রানের। শুরু থেকে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইংলিশদেরই মনে হচ্ছিল কিউইদের চেয়ে এগিয়ে। 

শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২০ রান। সেট হওয়া ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল ছিলেন উইকেটে। ইংলিশ বোলার ক্রিস ওকস। তাকে দুটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি মারলেন মিচেল। সিঙ্গেল ২টি এবং ডাবল নিলেন ১টি। ওভারের শেষ বলটিকে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।

১৬৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য শুরুটা ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। দলীয় ১৩ রানে দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। মার্টিন গাপটিল ৪ রানে ও কেন উইলিয়ামসন ফেরেন ব্যক্তিগত ৫ রান করে। তবে বিপর্যয় ঠেকাতে বড় জুটি গড়েন ড্যারেল মিশেল ও ডেভন কনওয়ে। 

৮২ রানের সেই জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয়া গেলেও নির্ভার হতে পারেনি ব্ল্যাকক্যাপসরা। ৩৮ বলে ৪৬ করে কনওয়ে ফেরার পরপরই আউট হন গ্লেন ফিলিপস। ফলে ফের ধাক্কা লাগে কিউই শিবিরে। 

অবশ্য দিনটা নিজের করে নিয়েছেন ড্যারেল মিশেল। ইংলিশ বোলারদের পিটিয়ে অর্ধশতক তুলে নিয়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। ৪৮ বলে ৭৩ রানের খুনে ইনিংসেই মূলত বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় ইংলিশদের। ৪ ছয় আর ৪ চারের মারে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন এই ব্যাটার। 

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান তোলে ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লে'র ছয় ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান। ষষ্ঠ ওভারে জনি বেয়ারস্টোকে ফেরান এডাম মিলনে। তবে প্রতিপক্ষের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারা জস বাটলারকে ফেরানোটাই প্রথম ১০ ওভারে ব্ল্যাকক্যাপসদের শীর্ষ সাফল্য। 

চলতি টুর্নামেন্টে একমাত্র শতক করা এই ওপেনার ফিরেছেন ২৪ বলে ২৯ করে। ইশ সোধির বলে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তবে দলের বিপর্যয় সামাল দেন ডেভিড মালান। তার খেলা ৩০ বলে ৪১ রানের ইনিংসেই বড় রানের দিকে এগোতে শুরু করে ইংলিশরা। 

টিম সাউদি মালানকে ফেরালেও থামানো সম্ভব হয়নি মঈন আলীকে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ৩৬ বলে অর্ধশতক করেন এই অলরাউন্ডার। ক্রিজে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। মাঝে লিয়াম লিভিংস্টোন ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলে তাকে যোগ্য সঙ্গই দেয়। নিউজিল্যান্ডের হয়ে একটি করে উইকেট শিকার করেন মিলনে, সোধি ও বোল্ট।

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন