আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, খালেদা জিয়া কি তা পারতেন: তথ্যমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, খালেদা জিয়া কি তা পারতেন? প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ৫৬তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সময় সাংবাদিকরা বেগম জিয়ার বিদেশ গমনের অনুমতি বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেই ব্যক্তি, যার আমলে তার ছেলের পরিচালনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে। এরপর উনি সংসদে দাঁড়িয়ে হাস্যরস করে বলেন, আমাদের নেত্রী ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।’

ড. হাছান বলেন, খালেদা জিয়া সেই ব্যক্তি, যার দুয়ারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গিয়ে ২০-২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন তার ছেলের মৃত্যুতে সমবেদনা জানানোর জন্য। উনি দরজা খোলেননি। বেগম জিয়া সেই ব্যক্তি, যাকে বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে দাওয়াত দিয়েছিলেন। আর অশোভন আচরণ করে সেদিন তা প্রত্যাখ্যান করেন উনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া সেই মানুষ, যিনি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করার জন্য, হত্যাকারীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য নিজের জন্মতারিখ বদলে ফেলেন। ১৫ আগস্ট কেক কাটেন, ভুয়া মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন। উনি আদালতে খালাস বা জামিন পাননি। তবু তাকে কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, বেগম জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন, তখন সঙ্গে তার পছন্দের গৃহপরিচারিকা রাখা হয়েছিল। যেটি উপমহাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তার প্রতি যে মহানুভবতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন, আমি ব্যক্তি হিসেবে কখনো তা দেখাতে পারতাম না। অন্য কেউ পারতো না। খালেদা জিয়া পারতেন কি না সেই প্রশ্নটা করেন।’ 

এসময় ‘সরকার লুটপাট-নৈরাজ্য চালাচ্ছে’ বলে বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল সাহেবরা দেশে যে কী পরিমাণ নৈরাজ্য বিভিন্ন সময় চালিয়েছে সেটি তো দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের রাজনীতি, মানুষকে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ করে রাখার রাজনীতি, স্কুলছাত্র, বিশ্ব ইস্তেমা ফেরত মুসল্লি, মসজিদের মধ্যে মোয়াজ্জিনের ওপর বোমা নিক্ষেপ, ভিন্নমতালম্বীদের ওপর হামলা এগুলো সবই মির্জা ফখরুল সাহেবরাই করেছেন। আমাদের দল সেই রাজনীতির চর্চা করে না।

এর আগে বক্তৃতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং অনন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় গত ৫৫ বছরের পথচলায় দেশ ও সমাজ গঠন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও গবেষণায় আরো ভূমিকা রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি বিশ্বসভায় ছড়িয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদান ও সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য নয়, সেখানে পাঠদান হবে, ডিগ্রি প্রদান করা হবে, একই সাথে সেখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, সংস্কৃতি, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তমতের চর্চা হবে। আমরা একটা জ্ঞান ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজে বসবাস করি। জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায় ভিত্তিক বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র সুসংহত হয় না। যেখানে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের চর্চা হয়না, যেখানে নিয়ম এবং নীতির ব্যত্যয় ঘটে, যেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয় না, যেখানে মুক্তমতের অবদমন করা হয়, সেখানে সমাজ এগোয় না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয়কে ঘিরে অনেক অম্ল-মধুর স্মৃতি রয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, আজকে এই জায়গায় এসে কথা বলার ক্ষেত্রে, আমার জীবনকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদালয়ের বহু অবদান আছে। প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় যে সাহস এবং শক্তি আমাকে যুগিয়েছে পরবর্তীতে রাজনীতির বন্ধুর পথ পরিক্রমার ক্ষেত্রে জীবনকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পরিচালনায় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন