আর্কাইভ থেকে জাতীয়

ভয়ংকর মাদক ‘ডিওবি’র পার্সেলের নেপথ্যে কুরিয়ার সার্ভিস কর্মকর্তা

দেশে প্রথমবারের মতো ‘ক’ শ্রেণির ভয়ংকর মাদক ডিওবি উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিমাণ ৯০ ব্লটার (পিস)। 

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল, খুলনায় একজনের কাছে এলএসডি রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে খুলনায় অভিযান চালায় অধিদফতরের কর্মকর্তারা। একজনের কাছে কিছু এলএসডি উদ্ধারের পর অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ডিওবির তথ্য মেলে। উদ্ধার করা হয় ৯০ ব্লটার ডিওবি।

মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত দুজনকে সোমবার গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তারা হলেন, আসিফ আহমেদ শুভ ও তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা। এছাড়াও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের খুলনা বয়রা বাজার শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকেও গ্রেফতার করা হয়। 

অধিদফতর জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মাদকসেবীদের কাছে প্রতি ব্লট (পিস) ডিওবি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এটা সেবনে তৃতীয় নয়ন খুলে যায় বলে দাবি মাদকসেবীদের। 

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিওবি সেবন করার পর সেবনকারীকে যেকোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্যমী হয়ে ওঠে। এরজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। বেশি পরিমাণে সেবন করতে মৃত্যু ঘটতে পারে।

অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ডিওবি আমাদের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত নিষিদ্ধ মাদক। ডিওবি অনেকটা এলএসডির মতো দেখতে হলেও ডিওবি আরও বেশি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও হতে পারে।

তিনি বলেন, এই মাদক কেনার জন্য ডার্ক ওয়েবসাইট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ২০০ ব্লট ডিওবি কেনেন খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডার করার পর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়। বিমানবন্দরগুলোতে উন্নতমানের স্ক্যানার না থাকায় কুরিয়ারে আসা ডিওবি ধরা পড়েনি। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অর্ডার করার পর এক মাসের ব্যবধানে এই মাদক শুভর বাসায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে যায়।

স্ক্যানারে ধরা না পরলেও বিদেশ থেকে এলএসডির মতো মাদক আসতে পারে এই ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য ছিল। গত আগস্ট মাসে কি-ওয়ার্ড ‘syash’ শব্দটি পান গোয়েন্দারা। এরপর চলে অনুসন্ধান। তিন মাসের বেশি সময় অনুসন্ধানের পর এই মাদকের সন্ধান মেলে বলে জানিয়েছে মাদক ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে শক্তিশালী স্ক্যানার নেই, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের নজরদারি ছিল। নজরদারির কারণেই এই মাদক আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি।

ডিওবির ক্রেতা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় শুভর বাসায় এলএসডি পাওয়া যায় আর অর্ণবের বাসায় পাওয়া যায় ডিওবি। তারা পোল্যান্ড থেকে কিনে ডিওবির ব্লটগুলো (প্রতিপিস) অর্ণবের বাসায় রাখেন। সে দুমাস আগে ২০০ ব্লট ডিওবি নিয়ে আসেন। যেগুলো তিনি নিজে সেবন করতেন এবং অন্যান্যদের কাছেও বিক্রি করতেন। নতুন ক্রেতা তৈরি করতে কিছু ব্লট বিনামূল্যেও দিয়েছেন তিনি।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস খুলনা বয়রা শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকে গ্রেফতারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে পার্সেল পাঠাতেন। গোপনে ক্রেতা সেজে পাঁচ ব্লট এলএসডির অর্ডার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। খুলনা থেকে কোনো বাধা ছাড়াই রাজধানী এলিফেন্ট রোড সুন্দরবন শাখায় পার্সেলটি পৌঁছায়।

প্রযুক্তির সহায়তায় প্রেরক শুভর সন্ধান পায় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে যিনি পার্সেলটি পাঠিয়েছেন তার মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র রাখেননি খুলনা বয়রা শাখার দায়িত্বশীলরা। আর তা করা হয়নি মাদক কারবারিদের সঙ্গে মামুনুর রশীদের যোগসাজশের কারণে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন