ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত পিটিআই সমর্থককে।
লাহোর ও করাচিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। বিক্ষোভ হচ্ছে পেশাওয়ারেও।
ইসলামাবাদের রাস্তায় শত শত বিক্ষোভকারী রাজধানীর প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। সেখানে ইমরান সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ছুড়েছে।
বিক্ষোভকারীরা রাস্তার সাইন উপড়ে ফেলেছে এবং রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচলের ব্রিজ ভেঙে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।
ইমরান খানের সমর্থকরা বেশ কিছু শহরে সুরক্ষিত সেনা ছাউনির বাইরে বিক্ষোভ করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইমরান খানকে গ্রেফতার করায় তারা ক্ষুব্ধ। ফরিদা রওদাদ নামে এক পিটিআই কর্মী বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়তো ভালো করতাম!
ইসলামাবাদের পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, সহিংসতায় পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং ৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
টুইটারে পোস্ট করা লাহোরে বিক্ষোভের ফুটেজ থেকে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েছে এবং আসবাবপত্র ও বাসার ভেতরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।
বন্দর শহর করাচিতে প্রধান সড়ক অবেরাধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।
রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিমের কোয়েটা শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মামলায় জামিনের জন্য আদালতে হাজির হয়েছিলেন। পিটিআই চেয়ারম্যানের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
গত বছরের এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর থেকে তিনি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ বছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা।
পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগে ইমরানকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশের বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পাঁচ হাজার কোটি রুপি বৈধতা দেয়ার বিনিময়ে কয়েকশ কোটি রুপি ঘুস নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
তবে ইমরান খান কোনো ধরনের আইনভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাকে গ্রেফতার করার আগে রেকর্ড করা এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, তিনি যেকোনো পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।
ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হবে কি হবে না এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী তাকে লাহোরের বাসভবন থেকে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে বারবার বাধা দিয়েছে ইমরান খানের সমর্থকেরা। চলতি বছরের মার্চ মাসেও ইমরান খানকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছিল দেশটির পুলিশ।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে জানানো হয়েছে, ইমরান খানের দলের এক নেতা এই অভিযান বন্ধ করার জন্য পিটিশন দায়ের করলে আদালত পুলিশের অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন।
কিন্তু পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আমির মির তখন বলেছিলেন, লাহোরের একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যেন ঠিকমতো হতে পারে সেজন্যই পুলিশ ইমরান খানকে গ্রেফতারের অভিযান স্থগিত করে।
দুর্নীতির অভিযোগে করা এক মামলায় আদালতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকার সময় রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী বেআইনিভাবে বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছিলেন, ইমরান খানকে গ্রেফতারের চেষ্টার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশ অনুসারে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল।
তিনি তখন অভিযোগ করেন, গ্রেফতার এড়াতে ইমরান খান তার দলের কর্মী, নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং উত্তেজনা ছড়িয়েছেন।
গত নভেম্বর মাসে সমাবেশ চলাকালে তাকে হত্যাচেষ্টার জন্য প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে দায়ী করেন ইমরান খান। তাকে হত্যার চেষ্টায় গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছিলেন পিটিআই প্রধান। সামরিক বাহিনী ওই অভিযোগ অস্বীকার করলে ইমরান খান মঙ্গলবার আদালতে যাওয়ার আগে এক ভিডিওবার্তায় জোর দিয়ে আবারও একই অভিযোগ তোলেন।
ভিডিওতে তিনি বলেন, আমার মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। ওই ব্যক্তি আমাকে দুবার হত্যার চেষ্টা করেছেন। যখন তদন্ত হবে আমি প্রমাণ করবো, ওই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করতে চেয়েছেন এবং তার সঙ্গে পুরো এক বাহিনী জড়িত। সবাই জানে কে তিনি। আমার প্রশ্ন হলো- একটি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কি এফআইআর করার কোনো অধিকার নেই?
প্রায় সাত মিনিটের ওই ভিডিওতে নানা অভিযোগ করেন ইমরান খান। এরপরই তাকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নেয় আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স।