আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

চাকুরি টাকা ফেরত না দিতে পারায় স্কুলে আসেন না শিক্ষক

অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন তোলার অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে। তিনি তিন বছর ধরে অনুপস্থিত তারপরও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন এই স্কুল শিক্ষক।

রোববার (১৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তিনটা পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার রাজীবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হায়দার আলীকে পাওয়া যায়নি। চলমান এসএসসি পরিক্ষার দায়িত্বে নেই তিনি। সেই দিন শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তার অনুপস্থিতির চিত্র পাওয়া গেছে। তবে আগের হাজিরা খাতায় তার নিয়মিত উপস্থিত দেখা গেছে।

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর রাজীবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হায়দার আলীর সঙ্গে রাজীবপুর গ্রামের তসলিম শেখের ছেলে সোহেল রানার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে হায়দার আলী সেনাবাহিনীর অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরি দেয়ার কথা বলে সোহেল রানার বাবা তসলিম শেখের কাছ থেকে দুই দফায় ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। হায়দার আলী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সদর দপ্তর ঢাকা-১২০৬ ও স্মারক নথি নং-২ইটি (০৯) এসও ২০১৮-১৯ অংশ ৮/৪১২৫(৫১৮) নিয়োগ পত্র সোহেল রানার হাতে ধরে দেয়। উক্ত নিয়োগ পত্র নিয়ে সোহেল রানা চাকুরিতে যোগদান করতে গেলে ঢাকা সেনানিবাস থেকে বলা হয় নিয়োগপত্রটি ভূয়া। পরে সোহেল বাড়িতে ফিরে এলে পরিবারের লোকজন হায়দার আলীর কাছে টাকা ফেরত চায়। সে সময় তিনি টাকা ফেরত দিতে দুই মাসের সময় নেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলে হায়দার আলী টাকা ফেরত না দেয়ায় সোহেলের পরিবারের লোকজন স্কুলে গিয়ে বিষয়টি জানান। স্কুলের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও গন্যমান্য বক্তির উপস্থিতে শিক্ষক হায়দার আলী টাকা পরিশোধের এক মাসের সময় নেয়। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সোহেলের পরিবারে লোকজন টাকার জন্য স্কুলে গেলে হায়দার আলী স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। সোহেলের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আর দেখাও করেন না টাকাও দেন না। বিষয়টি সোহেলের পরিবারের লোকজন প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা অফিসার দুই পক্ষকে চিঠি দিয়ে তার অফিসে ডাকেন। সোহেলের পরিবারের লোকজন উপস্থিত হলেও শিক্ষক হায়দার আলী উপস্থিত হননি। এবং আজ পর্যন্ত চিঠির জবাবও দেননি। এছাড়া তিনি তিন বছর থেকে স্কুলে আসেন না। কিন্তু তিনি নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর আপন সম্বন্ধী এবং স্কুলের সভাপতি প্রধান শিক্ষকের শ্যালক। হায়দার আলী স্কুলে না আসলেও প্রধান শিক্ষক উক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইটগার্ড সুলতান হায়দার আলীর ছাপেরহাটী ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মাস শেষে হাজিরা খাতায় সই করে নিয়ে আসে। অন্যদিকে চাকুরির টাকা ফিরে পেতে সোহেল রানা পরিবারের লোকজন স্কুল সময়ে প্রতিনিয়ত অবস্থান করছেন। এতে করে শিক্ষার্থীসহ অবিভাবকরা ঐ শিক্ষকের প্রতি বিরুপ মন্তব্যেবের বিভিন্ন ধরনের কথা শোনা গেছে।

প্রধান শিক্ষক চৌধুরী মোঃ ছাদ্দাকতুলবারী এমাদ বলেন, সহকারি শিক্ষক হায়দার আলী স্কুলের পার্শ্বে একজনকে চাকুরি দেয়া কথা বলে তিনি টাকা নিয়েছেন। বেশ কয়েকবার আমিও টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দিয়েছি। কিন্তু টাকা দেয় না। হায়দার আলী স্কুলে আসলেই যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তারা এসে টাকা চেয়ে অপমান করে। এজন্যই তিনি স্কুলে আসেন না। লোকজন আমার কাছেও টাকার জন্য প্রতিনিয়ত আসেন। তিন বছর স্কুলে না এসেও হায়দার আলী কিভাবে বেতন ভাতা উত্তোন করেন এ প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী মাস থেকে তার আর বেতন ভাতা দেয়া হবে না।

সভাপতি চৌধুরী মোঃ সাফিউল বারী লিয়াকত বলেন, সহকারী শিক্ষক স্কুলে না আসলে তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোন একশন নেয়া সুযোগ নেই। নিতে হলে আইন মেনে নিতে হবে আরও একটু সময় লাগবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক স্যারের আত্নীয় হওয়ায় হায়দার আলী স্কুলে না এসেও নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন। তার ক্লাস অন্যান্য শিক্ষককে নিতে হয়।

ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, হায়দার স্যারকে আমরা অনেক দিন হলে দেখি না। স্যারের ক্লাস গুলো অন্যান্য স্যাররা আজ একজন, কাল আরেকজন এভাবে নেয়।

এবিষয়ে অভিযুক্ত হায়দার আলীর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকের পরিচয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলেই ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মমিন মন্ডল অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।

গাইবান্ধা জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছাঃ রোকসানা বেগম বলেন, স্কুলে অনুপস্থিত থেকে কীভাবে বেতন ভাতা উত্তোলন করে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অনুউপস্থিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হবে। তিন বছর প্রতিষ্ঠান অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন