একজনের ভোট দিয়েছেন অন্যজন
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন অভিযোগ শোনা না গেলেও দুপুরের পর থেকে অভিযোগ আসে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে। বিশেষ করে গাজীপুর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাওরাইদ হাজি রোকন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে গোপনকক্ষে ঢুকে ভোটারের বদলে অন্য ব্যক্তিরা ইভিএমে বোতাম চেপে মেয়রের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই কেন্দ্রের তিনজন ভোটার এমন অভিযোগ করেন। তাদের দাবি, তাদের মেয়র পদের ভোট অন্যজন দিয়ে দিয়েছেন।
কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন নিপু নামে এক নারী। তিনি বলেন, আমি গিয়ে দাঁড়াইছি। আমার চয়েস মতো আমি টিপ দিমু। আমি দেখতাছি, আমার ভোটে টিপ একজন পুরুষ মানুষ দিয়ে দিছে। কেন দেবে উনি? মেয়রের টিপ ওই লোক দিছে, দুই কাউন্সিলের টিপ আমি দিছি।
তাসলিমা আক্তার নামে আরেক ভোটার বলেন, আমাকে একটা ভোটও দিতে দেয় নাই। ওই খানে এক লোক দাঁড়ানো ছিল। উনি প্রথমে মেয়রের বোতামে একটা টিপ দিছে। পরে আমারে বলে, এবার আপনার পছন্দমতো দেন। আমি বলছি, ভোট কাটেন। আমার পছন্দমতো আমি তিনটা ভোট দেব। উনি ভোট কাটবে না। পরে আমাকে আর কোনো ভোট না দিতে দিয়ে উনি আমাকে বের করে দিছে।
সীমা আক্তার নামে এক নারী ভোটার গোপনকক্ষে ঢোকেন। সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর এজেন্টও ওই নারীর সঙ্গে সঙ্গে গোপনকক্ষে যান।
এজেন্ট কেন গোপনকক্ষে প্রবেশ করছেন, এমন প্রশ্নে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. তাফাজ উদ্দিন বলেন, আমার কিছু করার নেই।
৫ নম্বর বুথটিতে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর এজেন্ট মো. নুরুজ্জামান ছাড়া অন্য কোনো মেয়রপ্রার্থীর এজেন্ট ছিল না।
কেন্দ্রের আরেকটি বুথে গিয়েও দেখা গেল, মেয়রপ্রার্থীদের মধ্যে কেবল নৌকার এজেন্ট রয়েছেন। সেখানে কয়েকজন নারী ভোটারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর এক কর্মীর কথাকাটাকাটি হচ্ছে। তাদের মধ্যে নাসিমা নামে এক নারী বলেন, আমি ইভিএমে ভোট দেয়া বুঝি না। তাই আমি বলেছি, আমার সঙ্গে আসা পাশের বাড়ির একজনকে বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু অন্য এক লোক এসে জোর করে চাপ দিতে চায়।
নাসিমার সঙ্গে আসা আইরিন বলেন, নাসিমা আমার পাশের বাড়ির। আমিই তো বুঝিয়ে দেব। অন্য লোক জোর করে আসে কেন?
জানতে চাইলে ওই বুথের মেয়রপ্রার্থীর এজেন্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর লোক। আমরা এই বুথে তিনজন আছি। কেউ বুঝতে সমস্যায় পড়লে বুঝিয়ে দিচ্ছি। এখানে ভালো ভোট হচ্ছে।
এই কেন্দ্র নারীদের জন্য। কেন্দ্রটির অনেক ভোটারেরই ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে। আর তাদের সহযোগিতা করার নামে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা গোপনকক্ষে প্রবেশ করে নিজেদের পছন্দমতো অন্যের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন বলে পরে আরও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এমন অভিযোগের বিষয়টি অজানা নয় সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদেরও। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছেও অনেকে এমন অভিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের বলেছি। তারা না বললে তো আমরা সহযোগিতা করতে পারি না।