আর্কাইভ থেকে ফিচার

চকচকে প্যাকেটের আকর্ষণে যে বিষাক্ত পদার্থ খাচ্ছে শিশুরা

দেশের ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী প্রায় ৫০ ভাগ শিশু কোমল পানীয়, অতিরিক্ত লবণ ও চিনিসমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২–এ এই চিত্র দেখানো হয়েছে।

চিকিৎসাবিদ, পুষ্টিবিদ ও গবেষকরা বলছেন, এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে দেয়। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

গেলো এপ্রিলে এই জরীপ প্রকাশ করা হয়। জরিপটি করেছে  জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।  জরিপে দেশের ৩০ হাজার ৩৭৫টি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসময় ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী ২ হাজার ৫৭৮ শিশুর খাদ্য গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় ।

জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৩২ শিশু তথ্য সংগ্রহের আগের দিন কোমল পানীয় পান করেছে। ৪৯ শিশু অতিরিক্ত চিনি ও লবণজাতীয় অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছে।

কোমল পানীয় বলতে নানা ধরনের ‘কার্বোনেটেড’ পানীয়, প্রক্রিয়াজাত ফলের রসকে বোঝানো হয়েছে। আর অতিরিক্ত লবণ ও চিনিজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে চিপস, চানাচুর, আধা প্রস্তুতকৃত (ইনস্ট্যান্ট) নুডলস এবং বার্গারসহ নানা রকম ‘জাংক ফুড’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সংজ্ঞা অনুসরণ করে এসব খাবারকে অস্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে। এসব খাবারে মাত্রাতিরিক্ত লবণ, চিনি ও চর্বি থাকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৭ লাখ হতে পারে।

জরিপের হার বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, ২৩ লাখের বেশি শিশু অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছা বলেছেন, বাংলাদেশে শিশুরা যেসব কৃত্রিম পানীয় পান করে, সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও সংরক্ষক (প্রিজারভেটিভ) থাকে। সংরক্ষক ও সুইটেনিং এজেন্টে (মিষ্টিকারক) আবার নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকে। এসব উপাদানের কারনে শিশুর অস্বাভাবিক শারীরিক গঠন হয়।

চিপস, বার্গার ও আধা প্রস্তুত করা নুডলসে সাধারণ লবণ বেশি ব্যবহার করা হয়। অল্প বয়সে এই অতিরিক্ত লবণের  খাবার শিশুর শরীরে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের শরীরে অতিরিক্ত লবণ গেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি হতে পারে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বড় হলে পরিণত বয়সে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।

শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেছেন, পাঁচটি ‘চ’ আদ্যক্ষরের খাবার এখন শিশুদের প্রধান খাদ্য হয়ে উঠছে। চিপস, চানাচুর, চকলেট, চুইংগাম ও চাটনি। এই খাবারগুলো সুষম খাবারের পরিপন্থী। এগুলো খেলে ক্ষুধা নষ্ট হয়।

শিশুদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে তিনটি বড় সমস্যা সৃস্টি হচ্ছে। এগুলো হলো আয়রনের ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ভিটামিন ডির ঘাটতিজনি নানা শারিরীক সমস্যা।

সন্তানকে এসব খাবার থেকে দূরে রাখতে মা–বাবাকে সচেতন হবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন