উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের কর্তৃত্ব বাতিল হলো যেসব কারণে: হাইকোর্ট
উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার বিধান বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে ইউএনওদের উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করেছে এবং ইউএনওদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে কোনো জবাবদিহিতা না রেখেই এ সংশোধনী করা হয়েছে। তাই এ বিধান বাতিল যোগ্য।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ২৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ।
পূর্ণাঙ্গ এ রায়ে উপজেলা পরিষদে ইউএনওদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার বিধান বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণার কারণ উল্লেখ করে চার দফা পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে।
১. উপজেলা পরিষদ হলো উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ এর ২৪ ধারার অধীনে গঠিত/প্রতিষ্ঠিত, সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদসহ ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত একটি স্থানীয় সরকার।
২. সংসদ উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৮ এর ৩৩ ধারা জাতীয় সংসদে সংশোধনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ না করে প্রশাসনকে (ইউএনওদের) দিয়েছে, যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদ এবং সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ সঙ্গেও তা সাংঘর্ষিক। অতএব, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা (যা ২০১১ সালের আইন নং ২১ অনুযায়ী (সংশোধিত) সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাতিলযোগ্য। উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ এর [৩৩ ধারা (১) বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।]
৩. সরকারি তহবিল দিয়ে অর্থায়নকৃত উন্নয়ন উদ্যোগ ইউএনওদের নেতৃত্বে এবং তাদের সভাপতিত্বে গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটি বাস্তবায়ন করে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী উপজেলায় সংশ্লিষ্ট কমিটি গঠিত হয় না। তাই এসব কারণে রিটকারীদের দাবি এখানে ব্যর্থ হয়।
৪. উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ২৬ ধারা লঙ্ঘন করে ‘উপজেলা পরিষদ’ এর জায়গায় ইউএনও কর্তৃক তাদের চিঠিপত্রে ‘উপজেলা প্রশাসন’ পরিভাষাটির ব্যবহার করা হয়েছে। এতদ্দ্বারা বৈধ কর্তৃত্ব ছাড়াই তা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এর কোনো আইনি প্রভাব নেই।
গত ২৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন— উপজেলা পরিষদ আইনের এ বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ফলে উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে জানান আইনজীবীরা।
১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারায় ২০১১ সালে সংশোধনী আনা হয়। ধারাটিতে ইউএনও পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়া এবং পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন করার বিষয়ে বলা আছে। সংশোধিত ৩৩ ধারা সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি একটি রিট করেন। একই বিধানের বৈধতা নিয়ে একই বছর আরেকটি রিট করেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত বিভিন্ন সময়ে রুল দেন।