আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

পরীমণির মামলায় নাসির-অমির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ঢাকার বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশের দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। অপর দিকে মামলার পলাতক আসামি শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তাররি পরোয়ানা জারি করেন।

আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিন চার্জশিট গ্রহণ করেন।

এদিকে, নাসির ও অমির আইনজীবী তাদের জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, জামিনের কোনো শর্তভঙ্গ করেননি তারা। তাই তাদের জামিন আবেদন করছি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

গেলো ১৪ জুন  ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমণি সাভার থানায় মামলা করেন।

পরীমণির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জুন গ্রেপ্তার করা হয় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে। এরপর রাজধানী বিমানবন্দর থানার মাদক মামলায় তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার এজাহারে পরীমণি বলেন, ‘গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা দেন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর তোমরা নামলে নামতে পার।’

এজাহারে পরীমণি আরও বলেন, ‘তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদ্যপানের জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে তিনি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।’

এজাহারে বলা হয়, ‘এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে।  সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর  ও জখম করা হয়।’

পরীমণি বলেন, ‘আমি প্রথমে পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়া হয়। এ সময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এক নম্বর আসামিকে সহযোগিতা করেন। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সে অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আমি আমার গাড়িতে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।’

পরীমণি অভিযোগ করে বলেন, ‘আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।’

১৩ জুন রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমণি । এরপর বিষয়টি নিয়ে রাতে বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন