গুলিবিদ্ধ উপজেলা চেয়ারম্যানের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ
নরসিংদীতে বাসায় ঢুকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত শিবপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ খান (৭৫) মারা গেছেন।
বুধবার (৩১ মে) বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত হারুনুর রশীদ খানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে ভারতের দিল্লী থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসার পর হৃদরোগ, প্রস্রাব ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গেলো (৭ মে) তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৯ মে রাত ১০ টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নেয়া হয়।
এদিকে হারুনুর রশীদ খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া রাখিলের নেতৃত্বে শিবপুর সদরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শিবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ গেইট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা হারুন খানের ওপর গুলির মামলার আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলি করার পর গুরুতর আহত অবস্থায় শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাস চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৩ এপ্রিল ভারতের দিল্লীতে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার একটি অস্ত্রোপচার শেষে (১ মে )দেশে ফিরে আসা হয়। এরপর ৭ মে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ মে রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজকে (বুধবার) বিকেল ৫ টা ১৪ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে ঘটনার দিন রাতেই নরসিংদী জেলা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ৪ জনকে আটক করে। ঘটনার দুই দিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগার এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।
এজাহারনামীয় আসামীরা স্থানীয় সাংসদ জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও তার ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জোনায়েদুল হক ভূঞা জুনুর ঘনিষ্ঠ। এর পর পুলিশ এজারহার নামীয় ৬ নম্বর আসামী নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার আজগর আলীর ছেলে ড্রাইভার নূর মোহাম্মদকে (৪৮) ও ৪ নম্বর আসামী শিবপুরের পুটিয়া ইউনিয়নের মুনসেফেরচর এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে শাকিলকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে এজাহারনামীয় দুজন। এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আরেক এজাহারভুক্ত আসামী শাকিল কারাগারে রয়েছে। আর এজাহারনামীয় প্রধান আসামীসহ ৪ জন দুবাইয়ে অবস্থান করছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। এই মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হবে।