‘সকল শূরা কমিটির মিটিং মোশারফ পরিচালনা করতো’
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়া’ পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার মঈন।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার জানান, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবসহ তিন সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল অর্থসহ গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের এলিট ফোর্স।
খন্দকার মঈন জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (৫ জুন) রাতে র্যাব-১ ও ৭ এর আভিযানিক দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে একটি অটোরিকশা থেকে মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব, জাকারিয়া হোসাইন ও মো. আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত ওরফে মামিদকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার মোশারফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান। তিনি ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে এবং পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে তিনি সংগঠনের অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং সমতলের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করতেন। আনসার আল ইসলাম থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা প্রাপ্তিপূর্বক তার কাছে জমা ছিল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকাকালীন হিজামা সেন্টারের আড়ালে সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন মোশারফ। ঢাকাস্থ সকল শূরা কমিটির মিটিং তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো।
খন্দকার মঈন আরও জানান, ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত সংগঠনের শুরা সদস্য মায়মুনসহ অন্যান্যরা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তার কাছে জমা রাখত। মোশারফ সংগঠনের অর্থায়নে মুন্সিগঞ্জে গবাদি পশুর খামার স্থাপন করেন। তথাকথিত হিজরতকৃত অধিকাংশ সদস্য তার খামারে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান নিতেন এবং তাদের শারীরিক কসরত ও তাত্ত্বিক জ্ঞান দিতেন। তিনি সংগঠনের আমির মাহমুদের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ত্র ও রসদ ক্রয়সহ সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করতেন এবং শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাতেন। এছাড়াও স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ সদস্যদের পাহাড়ে পাঠানোর সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করতেন। বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে যান। পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সংগঠনের আমির মাহমুদের নির্দেশনায় সমতলের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের অন্যান্য আত্মগোপনকৃত সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠনের সদস্যদের সংগঠিত করার চেষ্টা করতে থাকেন।
‘ইতোপূর্বে আনসার আল ইসলামের সদস্য থাকায় ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রাখতেন মোশারফ। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। পাহাড় থেকে পলায়নের সময় তার কাছে সংগঠনের প্রায় ২০ লাখ টাকা জমা ছিল যার মধ্য হতে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করেছে। গ্রেপ্তারকৃত দুই সদস্যকে নিয়ে গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করে সংগঠনের আত্মগোপনকৃত অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে আমিরের নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল মোশারফ।
গ্রেপ্তার জাকারিয়া সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, জাকারিয়া ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে ফরিদপুরে একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। ২০২১ সালে সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনটিতে যোগ দেন। পরিবারকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাওয়ার কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের প্রথম দিকে রাকিবের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি ও বাকলাইপাড়া হয়ে কেটিসিতে গমন করেন।
পাহাড়ে গমনের পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন জাকারিয়া। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে সমতলে আসে এবং সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে সংগঠনের আমিরের নির্দেশে রাকিবের সঙ্গে সংগঠনের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনকৃত সদস্যদের একত্রিত করতে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় যাওয়ার সময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তার আহাদুল কুমিল্লার একটি কলেজে অনার্স ৪র্থ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। তিনি ২০১৮ সালে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে সংগঠনের আমির মাহমুদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরবর্তীতে সংগঠনের আমিরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। প্রথমে প্রায় দুই মাস আমির মাহমুদের বাসায় অবস্থান করেন। পরবর্তীতে মাহমুদের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি হয়ে কেটিসিতে গমন করেন। পাহাড়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তিনিও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে সমতলে এসে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে সংগঠনের আমিরের নির্দেশে রাকিবের সঙ্গে সংগঠনের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনকৃত সদস্যদের একত্রিত করার চেষ্টা করেন।