আর্কাইভ থেকে ছাত্র-শিক্ষক

ইউজিসির অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা স্বায়ত্তশাসন পরিপন্থী : ইবি শিক্ষক সমিতি

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য প্রণীত ‘অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল’ প্রত্যাখান করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। একইসঙ্গে এই নীতিমালাকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা। বুধবার (২১ জুন) সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার সাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে এই নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৭ জুন ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য প্রণীত ‘অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল’ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পাঠায় এবং পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হবে মর্মে চিঠতে উল্লেখ করক হয়। ইবি শিক্ষক সমিতি মনে করে এ ধরণের পত্র ও নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্ত্বশাসনের পরিপন্থী। কেননা প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাসকৃত কিছু আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

 

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ ধরণের চিঠি ও নীতিমালার তীব্র প্রতিবাদ এবং প্রত্যাখান করছে। যখন শিক্ষকদের জন্য ‘স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো’ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে তখন মঞ্জুরী কমিশনের এ ধরণের পরে শিক্ষক সমাজ সংক্ষুব্ধ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বকীয়তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকল্পে আমরা অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো চিঠি ও নীতিমালা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

 

এদিকে কমিশনের ২০২১ সালের ৬ জুন ৪১তম মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ‘অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল’ প্রণয়নের জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে আহ্বায়ক এবং অর্থ ও হিসাব শাখার অতিরিক্ত পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে ইউজিসিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালকদের সদস্য করা হয়।

 

নীতিমালার ব্যাপারে ইউজিসি বলছে, বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রণীত নিজ নিজ আর্থিক নীতিমালা ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। ফলে দেখা গেছে একই বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রচলিত আর্থিক হিসাব পদ্ধতি ও নীতিমালা সরকারী সাধারণ আর্থিক নীতিমালার পরিপন্থী।

 

বর্তমানে ৫০টির অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মনীতি প্রচলিত থাকায় তা একত্রিত ও সমন্বয় করে একটি অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসার ম্যানুয়াল প্রণয়ন করে কমিটি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক প্রশাসন ও হিসাবরক্ষণের একটি বৃহত্তম দিক নির্দেশনা ও মৌলিক বিধি-বিধান হিসেবে কাজ করবে। একইসঙ্গে নীতিমালাটি বিশ্ববিদ্যায়সমূহের আর্থিক প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করে কমিটি।

 

কী আছে নীতিমালায় : নীতিমালায় মূলত জাতীয় পে-স্কেলের আওতাধীন ব্যয় বাদে সম্মানি, ভাতা, পরিতোষিকের হার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন : ভর্তি ও সেমিস্টার দুই ঘণ্টার পরীক্ষায় শিক্ষকদের সম্মানি ৮০০-১৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চার বছরের অনার্স সম্মান কোর্সের ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টার পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ৬০ টাকা, তিন ঘণ্টার ক্ষেত্রে ৮০ টাকা, চার ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। এক বছরের মাস্টার্স কোর্সের দুই ঘণ্টার পরীক্ষা খাতা মূল্যায়নে ৭০ টাকা, তিন ঘণ্টার ১০০ ও চার ঘণ্টার খাতার ১২০ টাকা করা হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে সদস্যরা ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা নিতে পারবেন। এভাবে হিসাব পরিচালনা, উন্নয়ন বাজেট, আয় বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ, বেতন-ভাতাদি পরিশোধসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয়ের নীতিও প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন