সিরিজ ভাগাভাগি; কি পেলো বাংলাদেশ
শত আশা-গানটা শূন্য ব্যান্ডের হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে বেশ ভালো করেই যায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে প্রথম টেস্ট জেতায়, দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে ভালোই আশায় বুক বেঁধেছিলেন দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। ক্রাইস্টচার্চের সবুজ উইকেটে টস জিতে সেই আশায় আরো আলো দেখাতে থাকে মুমিনুল হকের দল। কিন্তু মাঠের পারফম্যান্সের একেবারের হতাশাগ্রস্ত ছিলো।
গেলো রোববার (০৯ জানুয়ারি) থেকে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি), এই তিনদিন কোনো দাপটাই দেখাতে পারেনি সফরাকীরা। কিন্তু কেন? যেই দলটা প্রথম টেস্টে পুরোটা আধিপত্য করেছে, বর্তমান আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দলটির বিপক্ষে সেই দলটির কি এমন হলো যার কারণে সিরিজ নির্ধারনি দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস এবং ১১৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়!
টস হেরে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিং। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫২১ রানের ইনিংস ঘোষণা। টম ল্যাথামের ২৫২ রানের পর ডেভন কনওয়ের ১০৯ রানের ইনিংস। আর শেষদিকে টম ব্লাডেলের ৫৭ রান। তাতেই তাদের বিশাল সংগ্রহ। কিন্তু বল হাতে পেসাররা ছিলো ব্যাকফুটে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের সবুজ উইকেটকে বলা হয় পেসারদের স্বর্গরাজ্য। তাহলে কেন এবাদত-শরিফুল-তাসকিনরা ব্যর্থ। বিশেষ করে এবাদত হোসেনের বোলিং তান্ডবে প্রথম ইনিংসে দুমড়ে পরা কিউইরা, দ্বিতীয় টেস্টে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায়।
পুরো ম্যাচজুড়ে এবাদত-শরিফুল-তাসকিন কিংবা মিরজদের বোলিংয়ে ছিলো না কোনো ধার। বিশেষ করে ক্যাচ মিসের মহড়াতো ছিলোই। আর তাতেই জেকে বশে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ছিলো এক উইকেটে ৩৪৯ রান। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে উইকেট পেতে থাকেন বোলাররা। দিনের শুরু থেকেই উইকেটের ভিন্নতা দেখা যেতে থাকে। যা করা যায়নি প্রথম দিন তাই করা যাচ্ছিলো দ্বিতীয় দিনের খেলায়।
কিন্তু বোলাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কোনো ধারাবাহিকতা ছিলো না। প্রথম ইনিংসে তাসকিন আহমেদ বল করেন ৩২ ওভার ৫ বল। ৫ মেডেনের বিপরীতে ১১৭ রান দিয়েও উইকেট শূন্য থাকেন তিনি। শরিফুল ইসলামের করা ২৮ ওভারের মধ্যে ৯টিই ছিলো মেডেন। ৭৯ রানের খরচায় নেন ২ উইকেট। প্রথম টেস্টের নায়ক এবাদত হোসেন ২ উইকেট শিকার করতে ৩০ ওভার বল করেন। ১৪৩ রান দিয়েছেন পেয়ছেন মাত্র ৩ ওভার মেডেন।
কিন্তু ব্যাটাররা ছিলো একেবারেই বিপর্যস্ত। ১২৬ রানেই গুটিয়ে যাওয়া। ব্যাটারদের রানগুলো দেখুন-সাদমান ইসলাম ৭, মোহাম্মদ নাঈম ০, নাজমুল শান্ত ৪, মুমিনুল হক ০, লিটন দাস ৮, ইয়াসির আলী রাব্বি ৫৫, নুরুল হাসান ৪১। টেন্ট্র বোল্ট আর টিম সাউদি নেন ৮ উইকেট। আর কাইল জেমিসন নিলেন বাকি দুটি। তাদের বোলিং ফিগারের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ ওভার বোলিং করেছেন বোল্ট। সর্বোচ্চ ৪২ রান দিয়েছেন বোল্ট। ৪১ ওভার ২ বলেই অলআউট হয়ে যায় মুমিনুলের দল।
ব্যাটারদের বল সিলেকশন ভুলের পাশাপাশি ছিলো ম্যাচে নিজেদের টিকিয়ে রাখা ধৈর্য্যেও অভাব। নয়তো ৪১ রান কার নুরুল হাসান সোহনের আউটটা নিয়ে আলোচনার কিছুই ছিলো না। আর রাব্বি; নতুন বলে হয়তো অনেকেই তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন কিন্তু এটা ভুলে গেলেতো হবে না, জাতীয় দলের তারাই সুযোগ পান যারা দেশের ঘরোয়া ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করে আসছে।
দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা ভালো করে সফরকারী ব্যাটাররা। অন্তত দলীয় সংগ্রহটা দেখলে তা বোঝা যায়। ২৭৮ রান। তাহলে কি প্রথম ইনিংসের ভুল শুধরে উঠেছেন তারা। তা ভাবলে সত্যিই ভুল করা হবে। কারন ১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধ্বংসস্তুপে পরিনত হওয়া, টাইগার ব্যাটিং অর্ডারের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান লিটন দাস আর নুরুল হাসান সোহান। তাদের দু’জনের জুটিতে ম্যাচে প্রথমবারের মতো কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে দেখা যায়। দারুণ খেলছিলেন দুই ব্যাটার। কিন্তু ধৈর্য্যের পরীক্ষায় আবারো ফেল করেন সোহান। ৫৪ বল খেলা এই ব্যাটার পরাস্ত হন ডার্লি মিচেলের বলে। তাতে ভাঙে লিটনের সাথে করা ১০১ রানের জুটি। এখনো কি তার ছিলো বাড়ি ফেরার তাড়া?
লিটন তুলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। পরাজয় নিশ্চিত দলের। কিন্তু লক্ষ্য ছিলো পরাজয়ের ব্যবধান যতোটা কমানো যায়। শতকের পর খুব বেশিদূর যেতে পারেন নি লিটন। জেমিসনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ১৪টি চার ও ১ ছক্কায় ১০২ রান করে। যদিও রিভিও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
ব্যস নিভে গেলো সব প্রদীপ। রস টেইলরকে হাস্যউজ্বল বিদায়ের উপলক্ষ্য করে দিতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে কিউইরা। আর সফরকারীদের শুরু দেশের ফেরার প্রস্তুতি নেয়ার।
প্রশ্ন উঠে, কি পেলাম আমরা। একটি জয়। তাও-বা কম কিসের। তাও আবার বর্তমান আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দলটির বিপক্ষে! কিন্তু ব্যাট-বলের সঠিক সম্বন্বয় করতে না পারলে এই ধরনের জয়কে কখনই ধারাবাহিক করা যাবে না।
হাসিব মোহাম্মদ