আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

প্রেমের সম্পর্কে পেটে সন্তান, অতঃপর খুন

রংপুরের পীরগঞ্জে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক ও মাকে হত্যার ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। একই সঙ্গে ঘটনার মূলহোতা মাসুদ মিয়াকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মিডিয়া ইউংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, হত্যার শিকার ওই নারীর নাম শান্তনা। তার সঙ্গে মাসুদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা করে বসবাস শুরু করেন। এর কিছুদিন পরেই পেটে সন্তান আসে শান্তনার। এরপর তিনি বিয়ের জন্য চাপ দেন প্রেমিক মাসুদকে। এ সময় গাজীপুর থেকে রংপুরের পীরগঞ্জে যাওয়া শান্তনাকে আখক্ষেতে নিয়ে ওড়না পেঁচিয়ে ও পেটে আঘাত করে হত্যা করেন মাসুদ। একই সঙ্গে হত্যা করা হয় শান্তনার পেটে থাকা সন্তানকেও।

এরপর গেলো ১৫ জুলাই ওই আখক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় শান্তনা ও তার সন্তানের অর্ধগলিত মরদেহ। হত্যা মামলা হয় পীরগঞ্জ থানায়। সেই মামলার সূত্র ধরেই মাসুদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মাসুদ ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার জামগড়ায় একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। ২০২২ সালে একই গার্মেন্টেসে এসে চাকরিতে যোগদেন শান্তনাও। একই কারখানায় চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় তাদের। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।

মাসুদের দেয়া তথ্যমতে, তারা দুজনেই বিবাহিত। শান্তনা তালাকপ্রাপ্তা। প্রেমের সম্পর্কে গভীরতার একপর্যায়ে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া করেন আশুলিয়া এলাকায়। এরপর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন শান্তনা। এতে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন মাসুদকে। এনিয়ে সব সময় ঝামেলা লেগে থাকত তাদের মধ্যে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যার অযুহাতে রংপুরে চলে যান মাসুদ। ঢাকায় রেখেযান শান্তনাকে। গেলো ১২ জুলাই শান্তনা রংপুরের পীরগঞ্জে যান। জানতে পারেন মাসুদ বিবাহিত। স্ত্রী ও সন্তান আছে তার। তবুও স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য চাপ দেন মাসুদকে। কিন্তু বিষয়টি মাসুদের স্ত্রী ফরিদা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরিস্থিতি শান্ত করতে শান্তনাকে বিয়ের আশ্বাস দেন মাসুদ। ১৩ জুলাই শান্তনাকে পীরগঞ্জ থেকে ঢাকার বাসে তুলে দেন মাসুদের খালা। কিন্তু মাসুদ ফোন করে তাকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন।

যেভাবে হত্যা করা হয় শান্তনা ও নবজাতককে

শান্তনা বাস থেকে নেমে মাসুদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে খালাশপীরের কাছে পৌঁছালে মাসুদের সঙ্গে দেখা হয় তার। এরপর বড় একটি আখক্ষেতে নিয়ে যান শান্তনাকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শান্তনার ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তার শ্বাসরোধ করেন। একপর্যায়ে তার পেটে আঘাত করেন তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই ভূমিষ্ঠ হয় তার গর্ভজাত সন্তান। ঘটনার দুদিন পর, অর্থাৎ ১৫ জুলাই অর্ধগলিত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার হয় শান্তনা ও তার সন্তানের। সে সময় অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার হলেও পরে রহস্যের উন্মোচন করে র‌্যাব। শনাক্ত করে নিহতের পরিচয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন