আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

ছিটমহল বিনিময়ের আট বছর আজ

আজ ৩১ জুলাই। ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের আট বছর। ২০১৫ সালের এ দিনে মধ্য রাতে ভারত-বাংলাদেশে থাকা ছিটমহলগুলো স্ব-স্ব দেশের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে সংযুক্ত হয়। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দিদশা। ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বঞ্চিত এ মানুষগুলোকে মূলধারায় যুক্ত করতে বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার।

এক সময় দাসিয়ারছড়ার মানুষ অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করতেন। টানা ৬৮ বছর সেখানকার মানুষ কারাগারে থাকার মতো বন্দী জীবন কাঁটাতেন। আধুনিক ঘরবাড়ি তো দূরের কথা চলাচলের কোনো রাস্তাঘাটই ছিল না। ছিল না চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা। মাত্র আট বছরে বদলে গেছে প্রতিটি মানুষের জীবন মান। ছিটমহল এখন শুধুই ইতিহাস ও অতীত স্মৃতি।

মাত্র আট বছরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে ছিটমহলগুলোর। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সামাজিক নিরাপত্তার মতো নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সবকিছুই পূরণ করেছে সরকার প্রধান। দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য ছিটমহলগুলোর মতো উন্নয়নে ভরে গেছে দাসিয়ারছড়া ছিটমহলেও। উন্নয়নের ছোঁয়ায় ছিটবাসীরা পেয়েছেন আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশের সকল সুযোগ-সুবিধা।

নবমতম বর্ষে পদার্পণে এই ঐতিহাসিক দিনটি ধরে রাখতে সাবেক সমন্বয় কমিটি বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। সোমবার ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে কালিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ৬৮টি মোমবাতী জ্বালিনো হয়। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সাবেক ছিটমহল আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহলের সবচেয়ে বড়টি ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া। যার আয়তন ৬ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার।

ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ হেড কাউন্টিং ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানকার মোট জনসংখ্যা ৭ হাজার ৬০১। পুরুষ ৩ হাজার ৮১৭ ও মহিলা ৩ হাজার ৭৮৪। বর্তমানে ওইখানে শিক্ষার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। বিলুপ্ত হয়ে গেছে খড়ের ঘর। প্রায় প্রত্যেকেরই এখন ইট-সিমেন্টের বাড়ি। অথচ ৮ বছর আগেও অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব কিছুই পিছিয়ে পড়া একটি এলাকা ছিল ছিটমহল দাসিয়ারছড়া।

উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। পাকা করা হয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক। নির্মাণ হয়েছে ৩৬ মিটারের একটি বড় ব্রিজ, ছোট বড় ব্রীজ ও কালভার্ট। স্থাপিত হয়েছে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিও ভূক্ত হয়েছে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৫ টি মসজিদ, ১ টি মন্দির, ২ টি শ্বশানসহ রিসোর্স সেন্টার। ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, এছাড়ার শতভাগ সেচের আওতায় আনা হয়েছে কৃষি জমি। হাজার হাজার পরিবার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও সেনিটেশন ব্যবস্থা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪ টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। সেখানকার বাসিন্দাদের দেয়া হয়েছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড। এসব উন্নয়নে জীবনচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে এখানকার মানুষের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব পালটে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের দৃশ্যপট।

উল্লেখ্য,বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছিটমহল নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের ইন্দিরা গান্ধী ‘মুজিব-ইন্দিরা’ স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি দীর্ঘ সময় নানা কারণে বাস্তবায়ন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পায় এবং সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়া বিলুপ্ত হয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখন ছিটমহল শুধু ইতিহাস ও স্মৃতি।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন