কতটা ভয়ঙ্কর ওমিক্রনের বিএ২ উপ-ধরন?
সারা পৃথিবীতে এখন দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো: এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে - যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে - আর এর ফলে কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে।
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। তারা এখন কতটা নিরাপদ - তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফাইজার, এ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোভ্যাক, স্পুটনিক - এসব টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে?
করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশসহ ভারতেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে বিশ্ববাসীর মনেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানা যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠিকমতো জিনোম সিকোয়েন্সিং টেস্ট হলে দেখা যেত বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে করোনা আবার নিজেকে সামান্য বদলে ফেলেছে।
এবার ওমিক্রন নিজেকে সামান্য বদলে বিএ২ উপ-ধরন তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৫০০ জনেরও অধিক মানুষের শরীরে মিলেছে এই ভাইরাস।
বিএ২ ব্রিটেনে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং টেস্টের মাধ্যমে ব্রিটেনে ৪০০-এর অধিক মানুষের শরীরে ধরা পড়েছে এই ভাইরাস।
এমনকি ভারতেও ছড়াচ্ছে। তাই সতর্ক থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শুধু ভারত বা ব্রিটেনই নয়, এরই মধ্যে ৪০টি দেশে এই উপপ্রজাতির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
তবে ওমিক্রনের এই সাবভ্যারিয়েন্ট কিন্তু নতুন নয়। ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায়। লন্ডনেও এই সাবভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।
কতটা ভয়ঙ্কর ওমিক্রনের বিএ২ উপ-ধরন?
এ বিষয়ে ভারতের কোভিড টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ডা. জ্যোতির্ময় পাল বলেছেন, ভাইরাসের এই উপ-ধরন নিয়ে এতদিন আলোচনা হয়নি। এখন অনেকের শরীরেই এই সাবভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে গবেষণা চলছে।
তবে এখনো এটি সম্পর্তে বিষদভাবে কিছু জানা যায়নি। ওমিক্রনের থেকে বেশি দাপট দেখাবে কি না কিংবা কতটা সংক্রামক এই ভাইরাস তা এখনো জানা যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই তা জানা যাবে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই সাবভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ মোটমুটি ওমিক্রনের মতোই। তবে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি।
ওমিক্রন কতটা মারাত্মক সে চিত্রটা এখনো স্পষ্ট নয়
দক্ষিণ আফ্রিকার আরো কয়েকজন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে - ওমিক্রনে ঠিক কতটা গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে সে চিত্রটা এখনো পরিষ্কার নয়।
একজন ডাক্তার জানাচ্ছেন, প্রথমদিকে আক্রান্তদের লক্ষণ ছিল মৃদু। আরেকজন ডাক্তার বলেছেন, তিনি তরুণ-বয়স্ক কিছু রোগী দেখেছেন যাদের মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল।
ওমিক্রনের মোকাবিলায় প্রচলিত টিকাগুলো কতটা সক্ষম, এখন তার গবেষণা চলছে জোরেশোরে
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কোভিড সংক্রান্ত সরকারি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ইয়ান সানে বলছেন, প্রাথমিক উপাত্তে ভ্যাকসিন এখনো কার্যকর বলেই দেখা যাচ্ছে - কারণ যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের অধিকাংশই টিকা না-নেয়া রোগী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন এর কার্য়কারিতা কমে গেলেও টিকা যে পুরোপুরি অকার্যকর হবে তা নয় - খানিকটা কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
তাই তারা বলছেন, ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে টিকা নেয়া, মাস্ক পরা, এগুলোই সবচেয়ে ভালো উপায়।
কীভাবে সাবধান থাকবেন?
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো যহেতু বিএ২ সাবভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তেমন কোনো তথ্য সামনে আসেনি, তাই আলাদা করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তাই করোনাবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক সব সময় পরুন।
মাস্কই এই রোগের প্রধান হাতিয়ার। পাশাপাশি নিয়মিত ধুতে হবে হাত। ব্যবহার করুন স্যানিটাইজার। ভিড় বা জমায়েতে চলাফেরা করবেন না।
যারা এখনো করোনা টিকা নেননি তারা দ্রুত নিন। টিকা এই রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করবে।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট/ইন্ডিয়া ডট কম, বিবিসি
এস