আর্কাইভ থেকে জাতীয়

গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল বিজয়ী কালিয়াকৈরের সন্তান শাকিল

সম্প্রতি গ্রেট হিমালয় ট্রেইল পাড়ি দেয়ার বিশ্বের ৩৩তম ব্যক্তি হিসেবে গৌরব অর্জন করেছেন ২৯ বছর বয়সী শাকিল। তিনি বিশ্বের ৩৩তম এবং সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নেপালের গ্রেট হিমালয়া ট্রেইলের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। শুধু তাই নয় দেশের একমাত্র ও প্রথম ব্যক্তি গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল বিজয়ীও তিনি। শাকিল গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বাগচালা গ্রামের সন্তান।

গাজীপুরের কৃতি সন্তান ইকরামুল হাসান শাকিল নেপালের পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ‘গ্রেট হিমালয়া’ বা বৃহত্তর হিমালয়ের দুর্গমগিরি পথ "ট্রেইল" অতিক্রম করে ১০৯ দিনে পর্বতের উঁচুতে ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার বন্ধুর পথ হেঁটে শাকিল তাঁর স্বপ্ন ছুঁইয়েছেন। এ অভিযানে ৫ হাজার ৭৫৫ মিটার উঁচু তাশি-লাপৎসা পর্বতের চূড়ায় উড়িয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা। কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস ইকরামুল হাসান শাকিলকে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে। দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ অভিযান শেষে শাকিল গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বাগচালা গ্রামে ফিরে এসেছেন। তাকে এক নজর দেখার জন্য এলাকাসহ দূর দুরান্ত থেকে এসে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।

বিশ্বের ৩৩তম এবং সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নেপালের গ্রেট হিমালয়া ট্রেইলের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন ২৯ বছর বয়সী শাকিল। গ্রেট হিমালয় বা বৃহত্তর হিমালয়ের বা হিমাদ্রি হল হিমালয়ের রেঞ্জের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এবং অন্যান্য উচ্চ শৃঙ্গ যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোটসে এবং নাঙ্গা পর্বত বৃহত্তর হিমালয় পর্বতের অংশ। এর মোট বিস্তৃতি ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার এবং এগুলোর গড় উচ্চতা ২০ হাজার ফুট। গাঙ্গোত্রী হিমবাহসহ বেশ কয়েকটি হিমবাহ রয়েছে এ পথে। গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল অভিযানে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেপাল থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৯৩ জন অভিযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন মাত্র ৩২ জন অভিযাত্রী। সেই হিসেবে শাকিল ৩৩তম সফল অভিযাত্রী।

দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ অভিযানের বিশেষ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শাকিল বলেন, বেশ কয়েকবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসার ভয়ংকর সব কাহিনী। নেপালের পশ্চিম প্রান্তের হিলশা সীমান্ত থেকে শুরু করে পূর্বাঞ্চলীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্প পর্যন্ত অভিযানে তিনি ২৯টি দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করেছেন। এর মধ্যে ১৪টিই ছিল বিপদসংকুল। বেশ কয়েকবার বিপদের মুখে পড়েও ফিরে এসেছেন। শাকিল বলেন, আমার এই অভিযানে এগিয়ে এসেছিল হা-মীম গ্রুপ। দারাজও সহযোগিতা করেছে। দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত হা-মীম গ্রুপ ও দারাজের প্রতি আমি কতৃজ্ঞ। স্পন্সর পেলে আরও বড় কোনো অভিযানে বের হব শিগগিরই।

শাকিল কালিয়াকৈর উপজেলার বাগচালা গ্রামের প্রয়াত খবির উদ্দিন ও শিরিন আক্তার দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে প্রথম। সে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়াশোনা শেষ করেছেন। কাব্য সাধনা দিয়ে তাঁর স্কুলজীবন শুরু হলেও পরে পাহাড়-পর্বতের চূড়া স্পর্শ করার নেশা পেয়ে বসে। এর আগেও শাকিল আরোহণ করেছেন ৬ হাজার ১৮৬ মিটার উঁচুর মাউন্ট কায়াজো রিপর্বত, ৭ হাজার ১২৭ মিটার উঁচুর হিমলুং, ৬ হাজার ৩৩২ মিটারের দোলমা খাংসহ বেশ কিছু পর্বত।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ নিজস্ব কার্যালয়ে বিশ্বের ৩৩তম সফল অভিযাত্রী ইকরামুল হাসান শাকিলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শাকিল শুধু কালিয়াকৈরের গৌরব নয় তিনি বাংলাদেশের গৌরব ও অহংকার। তার সফলতা কামনা এবং অভিনন্দন জানান।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন