আর্কাইভ থেকে আন্তর্জাতিক

ওয়াগনারের সহায়তা চাইল নাইজারের জান্তা

কোনো রক্তপাত ছাড়াই গেলো ২৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে অবরুদ্ধ করে নাইজারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। তবে তাদের এ অভ্যুত্থানকে ভালোভাবে নেয়নি আফ্রিকা অঞ্চলের ১৫ দেশের জোট ইকোয়াস। জোটটি গেলো সপ্তাহে হুমকি দেয় রোববারের (৬ আগস্ট) মধ্যে বাজোমকে ক্ষমতায় পুনর্স্থাপন করতে হবে; নয়ত তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো হবে।

আর এ সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকে রাশিয়ার কুখ্যাত ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সহায়তা চেয়েছে নাইজারের জান্তা।

শনিবার (৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, নাইজারের অভ্যুত্থান নেতা জেনারেল সালিফু মুডি দুদিন আগে পার্শ্ববর্তী দেশ মালিতে যান এবং সেখানে ওয়াগনার প্রতিনিধির সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেন।

সোফান সেন্টারের গবেষক ও সাংবাদিক ওয়াসিম নাসের এ বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স ২৪ প্রথম এ বৈঠক নিয়ে খবর প্রকাশ করে। পরবর্তীতে মালির তিনটি সূত্র ও একজন ফরাসি কূটনীতিক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ সাংবাদিক বলেছেন, ‘নাইজারের জান্তার ওয়াগনারকে প্রয়োজন কারণ ক্ষমতা ধরে রাখতে ওয়াগনার তাদের নিশ্চয়তা দেবে।’

নাম গোপন রাখার শর্তে পশ্চিমা এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, তারাও শুনেছেন নাইজারের অভ্যুত্থানকারীরা মালিতে অবস্থানরত ওয়াগনার সেনাদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন।

এদিকে ১৫ দেশের জোট ইকোয়াসের সামরিক প্রধানরা গেলো শুক্রবার (৩ আগস্ট) সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। এর আগের দিন ইকোয়াসের একটি প্রতিনিধি দল নাইজারের জান্তা প্রধান জেনারেল আব্দুররহমান চিয়ানির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের নাইজারে প্রবেশই করতে দেয়া হয়নি। এরপর ইকোয়াস জোটভুক্ত দেশের সেনা প্রধানরা সামরিক অভিযান চালানোর জন্য সেনাদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন।

যদিও সামরিক অভিযান চালানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জোটের সদস্য দেশগুলোর সরকার প্রধানরা এবং এ অভিযান পরিচালনার আগে তাদের ঐকমতে পৌঁছাতে হবে।

মালিতে যাওয়ার পর জেনারেল সালিফু মুডি সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, নাইজারকে ‘নতুন লিবিয়া’ হতে আটকাতে যা প্রয়োজন তাই করবেন তারা।

নাইজারে যদি সামরিক অভিযান চালানো হয় তাহলে এটিতে নেতৃত্ব দেবে নাইজেরিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবো সিনেটের কাছে অনুমোদন চেয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠান। তবে সিনেট সামরিক অভিযানের বদলে অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া ইকোয়াসের আরেক সদস্য আলজেরিয়া জানিয়েছে, তারাও সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না।

এদিকে রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে এখন অবস্থান করছে। এরমধ্যে মালিতে তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। মালিতেও ২০২১ সালে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। এরপর ওয়াগনার গ্রুপ সেখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে। ওয়াগনারের সেনারা মালিতে যাওয়ার পর দেশটি থেকে ফ্রান্সের সেনাদের বের করে দেয়া হয়।

বর্তমানে নাইজারই একমাত্র দেশ যেখানে ফ্রান্সের প্রায় দেড় হাজার ও যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজারের বেশি সেনা রয়েছে। আর দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর আশঙ্কা করা হচ্ছে এসব সেনাদের বের করে দেয়া হবে এবং ওয়াগনার এখানে প্রবেশ করবে।

আর এ আশঙ্কা থেকে ফ্রান্স জানিয়েছে, ইকোয়াস যদি কোনো সামরিক অভিযান চালায় তাহলে এতে সমর্থন দেবে তারা। যদিও সমর্থন বলতে ফ্রান্স অভিযানে নিজ সেনাদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বুঝিয়েছে কিনা— সেটি নিশ্চিত নয়।

 

এসি/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন