নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে যে দু’টি বার্তা দিতে চায় ভারত
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ ইভেন্টে যোগ দেয়ার জন্য আগামী মাসে ভারত সফরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই সফরের সময় শেখ হাসিনাকে দু’টি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে ভারত।
সোমবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। বস্তুত বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জি-২০ ইভেন্টে যোগ দেয়ার জন্য আগামী মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ভারত তাকে দু’টি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে। যার প্রথম বার্তাটি হচ্ছে- বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে।
আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- আওয়ামী লীগকে তার সকল চীনপন্থি ও ইসলামপন্থি নেতাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, শেখ হাসিনার জন্য জোড়া এই বার্তার কথা ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার (সিকিউরিটি এস্টাবলিশমেন্ট) একটি সূত্র জানিয়েছে। আর এই বার্তা বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্যের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার ওই সূত্রটি জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের — ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র — নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে....। ভারত এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে এসব বৈঠক হয়েছে।’
ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ‘অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের মত পার্থক্য ছিল (বিশেষ করে ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন নিয়ে)। তবে এবার এই দুই দেশের মধ্যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিস্তৃত ঐক্যমত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জি-টোয়েন্টি ইভেন্টের জন্য দিল্লিতে আসলে তাকে এই দু’টি বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, যদিও বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে শেখ হাসিনা দাবি করে আসছেন, তারপরও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের শেষ দু’টি জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানদণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ পোষণ করেছিল।
এর বিপরীতে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে সামনে আসা অভিযোগ সম্পর্কে কখনোই কোনও প্রশ্ন তোলেনি নয়াদিল্লি। ২০১৮ সালের বিতর্কিত সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন জোট ৯৬ শতাংশের বেশি আসন পেয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই প্রথম শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, বাংলাদেশের নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে তা নিয়ে ভারত ততক্ষণ চিন্তা করবে না যতক্ষণ ফলাফল হাসিনার পক্ষে থাকে। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবসময়ই সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে থাকে নয়াদিল্লি।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, যদিও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য চলাচলের অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত ভারতের অনেক ইচ্ছাই আওয়ামী লীগ সরকার পূরণ করেছে, তারপরও চীনের সাথে হাসিনা সরকারের আপাত নৈকট্য নয়াদিল্লির জন্য প্রাথমিক উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
আর এই কারণেই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এই ফ্যাক্টরটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে একই অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।