প্রথমবারের মতো চিনি রপ্তানি বন্ধ করছে ভারত
বাংলাদেশের বাজারে চলছে চিনির বাড়তি দাম। খোলা চিনি পাওয়া গেলেও প্রায় সময়ই বাজার থেকে অনেকটাই উধাও হয়ে যায় প্যাকেটজাত চিনি। এই পরিস্থিতিতে চিনি রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে চলেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। গেলো ৭ বছরের মধ্যে এবারই প্রথমবার এই পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ভারত সরকারের বেশ কযেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী অক্টোবর থেকে ভারতে নতুন মৌসুম শুরু হতে চলেছে এবং সেই সময় থেকেই মিলগুলোর ওপর চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে বলে দেশটির তিনটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে।
আর তেমনটি হলে গেলো সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারতের বাইরে দেশটির চিনির চালান বন্ধ হয়ে যাবে। ভারতের সরকারি সূত্রগুলোর দাবি, বৃষ্টির অভাবে আখের ফলন কমে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে ভারতের চিনির অনুপস্থিতি এই পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে আরও মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা তৈরি করছে।
সরকারি নিয়মের কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ‘আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে- চিনির স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা এবং উদ্বৃত্ত আখ থেকে ইথানল তৈরি করা। আসন্ন মৌসুমে রপ্তানি কোটায় বরাদ্দ করার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত চিনি থাকবে না।’
রয়টার্স বলছে, গেলো মৌসুমে রেকর্ড ১১.১ মিলিয়ন টন চিনি বিক্রি করার পর ভারত চলতি মৌসুমের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলগুলোকে মাত্র ৬.১ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে বিদেশে বিক্রি রোধ করতে চিনি রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করেছিল ভারত।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে একসাথে যে আখ উৎপাদন হয় তাতে ভারতের মোট চিনি উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি হয়ে থাকে। তবে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয় এমন জেলাগুলোতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত গড় উৎপাদন ৫০ শতাংশেরও কম হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের এক শিল্প কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ফলে চিনির উৎপাদন কমে যাবে এবং এমনকি ২০২৪-২৫ মৌসুমে আখ রোপণও কমে যাবে।
রয়টার্স বলছে, ভারতের স্থানীয় চিনির দাম এই সপ্তাহে গত প্রায় দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এতে করে আগস্টে মিলগুলোকে অতিরিক্ত আরও ২ লাখ টন চিনি বিক্রি করার অনুমতি দেয় দেশটির সরকার।
অন্য একটি সরকারি সূত্র বলেছে, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগের বিষয়। চিনির দাম সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বেড়েছে তাতে এই পণ্য রপ্তানির কোনও সম্ভাবনা নেই।’
২০২৩-২৪ মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন ৩.৩ শতাংশ কমে ৩১.৭ মিলিয়ন টনে নেমে যেতে পারে। তৃতীয় সরকারি সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা গত দুই বছরে মিলগুলোকে প্রচুর পরিমাণে চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছি। তবে আমাদের (নিজেদের জন্য) পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং স্থিতিশীল মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’
এর আগে ভারত গত মাসে বাসমতি নয় এমন সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আর এটি ক্রেতাদের কার্যত অবাক করেছে। এছাড়া গত সপ্তাহে পেঁয়াজের রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কও আরোপ করেছে নয়াদিল্লি।
মূলত চলতি বছরের শেষের দিকে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের হওয়ার কথা রয়েছে এবং সেটিকে লক্ষ্য রেখেই খাদ্যের দাম কমানোর চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।