আর্কাইভ থেকে এশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত চাপ বাংলাদেশে কট্টরপন্থিদের উত্থান ঘটাতে পারে

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে খুব বেশি চাপ দিলে তার প্রতিক্রিয়ায় শেষপর্যন্ত কট্টরপন্থি শক্তিগুলোর হাত শক্তিশালী হতে পারে এবং তার ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিক একাধিক সাক্ষাতে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে ভারত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সোমবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত চাপ দেশটিকে চীনের আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। আর তেমনটি হলে গোটা অঞ্চলের ওপর এর প্রভাব পড়বে বলে বিশ্বাস করে নয়াদিল্লি।

যদিও ভারতীয় পক্ষ নিশ্চিত করেছে, তারাও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত চাপ দিলে তার ফলে বাংলাদেশে কট্টরপন্থি ও মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটতে পারে। শেখ হাসিনার সরকার এতদিন এ ধরনের শক্তিগুলোকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

#SheikhHasina, who has been in power since 2009 and is eyeing an unprecedented fourth consecutive term, is seen as one of #India’s closest allies in the neighbourhood.

(@Rezhasan reports)https://t.co/pdudqXUTyC

— Hindustan Times (@htTweets) August 29, 2023

সম্প্রতি বাংলাদেশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞারও হুমকি দিয়েছে তারা।

ভারতের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। গত ২৩ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ভারতকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, জিনপিং বলেছেন, বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে চীন এবং পারস্পরিক স্বার্থরক্ষায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করবে বেইজিং।

বিবৃতিতে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলা হয়, পারস্পরিক সম্মান এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে জয়ের দিকে নজর রাখছেন।প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হিসেবে দেখা হয় তাকে। ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের প্রধান বন্দরগুলো ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি-বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচন ইস্যুতে হাসিনা সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপ বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) উজ্জীবিত করেছে।

বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসনে জয় পেয়েছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখিত একটি সূত্র বলেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলটি কয়েক ডজন আসনে জিততে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে নয়াদিল্লির। পাকিস্তানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখা দলটিকে সবসময় ভারতবিরোধী হিসেবে দেখা হয়। গত ১০ জুন ঢাকায় বিশাল জনসমাবেশ করেছে জামায়াত। গত ১০ বছরের মধ্যে এটিই ছিল তাদের প্রথম জনসমাবেশ।

ভারতের বিশ্বাস, জামায়াতের শক্তিবৃদ্ধি কট্টরপন্থি শক্তিগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে এবং এটি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন