পাঁচ হাজার টন ইলিশ চায় ভারত
আসছে হিন্দু সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে এবারও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি হতে পারে ভারতে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত এ ইলিশ। শতাধিক আবেদন থেকে প্রকৃত রপ্তানিকারকদের বাছাইয়ের কাজ চলছে এখন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুমতি পাওয়ার পর চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রপ্তানিকারকদের নাম ও রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন হতে পারে।
দুর্গাপূজা সামনে রেখে এবারও পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানিয়েছে ভারতের কলকাতার ব্যবসায়ীরা। ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে এ আবেদন করে। ৪ সেপ্টেম্বর তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতবার পূজার সময় ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪–এর বিধিবিধান মেনে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা দেখে শর্ত সাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হবে। শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কায়িক পরীক্ষা করানো, রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে চাহিদা আছে। বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের আগ্রহও আছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কী পরিমাণ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’
অনুমোদন দেওয়ার পরও রপ্তানি কম হয় কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘অনেক সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দামের পার্থক্য বেশি না থাকায় রপ্তানিকারকদের মুনাফা কম হয়। এটা একটা কারণ হতে পারে।’
আসছে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
দুর্গাপূজা শুরু হবে আগামী অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে। এছাড়া অক্টোবরে ২২ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। গেলো বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার তাই আগেভাগেই রপ্তানির অনুমোদন দেবে বলে জানা গেছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে, তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে কি না, তা নজরদারিও করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ থেকে ভারতে আবার ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পূজা ও নিষেধাজ্ঞা মোটামুটি কাছাকাছি সময়ে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা ইলিশ রপ্তানি করতে পারেন না। রপ্তানির জন্য বেশি সময় না পাওয়া এবং সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও কিছু প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়।
বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএফইএ) হিসাবে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। তা থেকে রপ্তানি যেটুকু হয়, তা খুবই সামান্য। এ কারণে দাম ও সরবরাহে খুব একটা প্রভাব পড়ে না বাজারে।
বিএফএফইএ সভাপতি বেলায়েত হোসেন জানান, ‘আমার জানামতে, যারা ইলিশ রপ্তানি করবেন, তারা ইতিমধ্যে কিনে ফেলেছেন। তবে রপ্তানির জন্য কমপক্ষে দুই মাস সময় দেয়া উচিত। আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয়া হলেও এখন সমিতির সদস্যরা আবেদন করলেই অনুমোদন পেয়ে থাকেন।’