নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনের দাবি রোড সেইফটি কোয়ালিশনের
সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দিন দিন রোডক্র্যাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানিয়েছে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে দেশে ৩ হাজার ৫৬২টি রোডক্র্যাশ হয়েছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ জন, আর আহত ৫ হাজার ১৭২ জন। অথচ জাতিসংঘ স্বীকৃত ‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী, এবং রোডক্র্যাশ পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থাপনা) সমন্বয়ে একটি পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে রোডক্র্যাশের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করে রোডক্র্যাশ কমানো সম্ভব হয়েছে।
এতে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। লিখিত বক্তব্যে বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরও রোডক্র্যাশের সার্বিক হার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। অথচ এসব অনাকাঙ্খিত মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই কতটা আন্তরিক প্রশ্ন থেকে যায়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য উন্নত দেশগুলো সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্টেশন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও রোডক্রাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) আলোকে নিজেদের আইনি ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে। তারপরও আমাদের বর্তমান আইনি ও নীতি কাঠামোতে এ দর্শন সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
তবে আশার কথা হলো, বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় গৃহীত বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের কিছু ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা এ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়কের জন্য আলাদা আইনি কাঠামোর জোর দাবি জানাই।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এ আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্টের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা সড়কে রোডক্র্যাশের কারণে মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
সুতরাং সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের সকলের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ-এর সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (রোড সেফটি) ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান, সিআইপিআরবির পরিচালক ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ সেক্টরের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড (আইসিএল) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর খন্দকার হাসিবুজ্জামান, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে সহকারী অধ্যাপক বজলুর রহমান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষে সিফাত ই রাব্বানী এবং স্টেপস্ টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এর চন্দন লাহিড়ীসহ কোয়ালিশনের অন্যান্য নেতারা।