রাবির হলে শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় মেস সিস্টেম উদ্বোধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৈয়দ আমীর আলী হলের ডাইনিংয়ে মেস ব্যবস্থা চালু হয়েছে। রবিবার (১ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষ এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
হলের ডাইনিংয়ের খাবারের নিম্নমান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। ফলে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে হলের ডাইনিংয়ে মেস সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত নেন হল প্রাধ্যক্ষ। এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে দুইবার আলোচনা করেছেন তিনি। সবশেষ ২৫ সেপ্টেম্বরে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে বিশেষ এক মতবিনিময় সভায় বসে হল কর্তৃপক্ষ। সেখানে শিক্ষার্থীদের সকল সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চান হল প্রাধ্যক্ষ। সেখানে মেস ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ এটি পরিচালনার জন্য ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ কার্যক্রম তদারকি এবং পরিচালনায় সহায়তা করবেন।
ডাইনিং এর নাম দেওয়া হয়েছে 'ইসাবেলা ক্যাটারিং।' নামের বিশেষত্ব সম্পর্কে প্রাধ্যক্ষ বলেন, হলের নাম যেহেতু সৈয়দ আমীর আলী তাই ওনার স্ত্রীর নামের সাথে মিল রেখে এবং তাদের স্মৃতিকে পরিপূর্ণ করতেই এর নাম দেওয়া হয়েছে ইসাবেলা। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরাও নামটা বেশ পছন্দ করছেন।
এখানে খাওয়ার জন্য আগের দিন দুপুর এবং রাতের টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। দুই বেলার দাম ৩৫ টাকা করে মোট ৭০ টাকা। পরিচালনা কমিটির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিনের জন্য দুপুরে ২০৪ টি এবং রাতের ১৭৯ টি টোকেন বিক্রি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর সাড়ে বারোটায় হলের প্রাধ্যক্ষ ফিতা কেটে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর পুরো কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় হল প্রশাসনের সবাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে দুপুরে খাবার খান।
কক্ষের গেটের পাশে এই মেস ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শের জন্য একটা বক্সও রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এসময় শিক্ষার্থীদের খাওয়া শেষে, ‘খাবার ভালো তবে মুরগিতে আলু ও ঝোল আরেকটু বেশি দিলে ভালো হয়’, ‘অনেকদিন পর তৃপ্তি করে খেলাম’, ‘ভালো লেগেছে অনেক’, ‘একেকদিন একেক রুমের সদস্যরা বাজার করলে ভালো হয়’, ‘দুইবেলায়ই মাছ ও মুরগীর অপশন রাখা যেতে পারে, যার যেটা ইচ্ছা সে সেটা খাবে’ ইত্যাদি মতামতসহ বিভিন্ন রকম অনুভূতি এবং পরামর্শ চিরকুটে লিখে দেয়ালে এবং বাক্সে রাখতে দেখা যায়।
খাবার খাওয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ এবং হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আল ইমরান বলেন, এককথায় অনবদ্য। এই টাকায় এই মান ধরতে রাখতে পারলে আশা করি শিক্ষার্থীরা খেয়ে তৃপ্তি পাবে। আজকে যেহেতু শুরু হলো, কয়েকদিন চলুক তারপর এটার সকল দিক আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে।
সংস্কৃতি ও ভাষা বিভাগ এবং হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম ইমন বলেন, এরকম স্বাদের খাবারের চাওয়া আমাদের আগে থেকেই ছিল। বাইরে এই খাবারই খেতে গেলে অনেক বেশি টাকা লাগে। এই রকম যদি নিয়মিত দিতে পারে তাহলে অন্যান্য হলেও এটা চালু হতে পারে।
মেস ব্যবস্থা পরিচালনা কমিটির সদস্য ম্যারটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করে কিভাবে এটা ব্যবস্থাপনা করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করার পর ১৪ সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির পরিচালক হিসেবে থাকবেন প্রাধ্যক্ষ স্যার। আমাদের আসল চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিদিন বাজার করা। আশা করি সবকিছু সুন্দরভাবে চলবে।
হল সুপারভাইজার মকসুম আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেরা বাজার করবে এবং খাবারের জন্য একদিন আগে টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। ছাত্রদের সাথে কয়েকদফা হল প্রশাসন মিটিং করছে। স্বেচ্ছায় কাজ করতে যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে টোকেন, বানানো, বাজার করা, ডায়নিং পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে নতুন এই সিস্টেম চালু করতে হলের শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছে হল প্রশাসন।
সার্বিক বিষয়ের হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়ে প্রথমেই শিক্ষার্থীদের কাছে বলি তোমাদের খাবারের মান নিয়ে আমি কিছু করতে চাই। এরপর তাদের নিয়ে কয়েকবার আলোচনা করার পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আশা করছি এটি টেকসই হবে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের টাকা দিয়ে বাজার করবে, তারাই খাবে। এখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো সুযোগ নেই। এখানে দলীয় কোনো ছাত্রকে আমরা রাখিনি। তবে তারা উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারে। তারা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিবে। এই ব্যবস্থা চলমান রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভূমিকাই মুখ্য বলে জানান তিনি।
এ সময় হলের আবাসিক শিক্ষকসহ হলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।