রুশ হামলা থেকে বাঁচতে ভূগর্ভস্থ স্কুল তৈরি করছে ইউক্রেন
টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং অন্যান্য অবকাঠামোর পাশাপাশি স্কুল ও হাসপাতালের মতো বেসামরিক অবকাঠামোকেও রুশ বাহিনী হামলার লক্ষ্যবস্তু করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর তাই রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা থেকে রক্ষা পেতে প্রথমবারের মতো ভূগর্ভস্থ স্কুল তৈরি করতে চলেছে ইউক্রেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে এ ধরনের স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে ইউক্রেন তার প্রথম সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বলে শহরটির মেয়র বলেছেন।
আল জাজিরা বলছে, রাশিয়ান সীমান্ত থেকে ৩৫ কিমি (২০ মাইল) এরও কম দূরত্বে অবস্থিত খারকিভ শহরের বহু অংশ প্রায় প্রতিদিনই রাশিয়ান বিমান হামলার শিকার হয়েছে। মূলত সীমান্ত থেকে এই শহরের দূরত্ব কম হওয়ার কারণেই শহরের বাসিন্দারা ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর সময় পাওয়ার আগেই রাশিয়া আক্রমণ চালাতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা থেকে রক্ষা পেতে প্রথমবারের মতো ভূগর্ভস্থ স্কুল তৈরি করার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন। খারকিভের মেয়র ইহর তেরেখভ টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রথম ভূগর্ভস্থ স্কুল তৈরি করার পরিকল্পনা করছি আমরা। এ আশ্রয়স্থল খারকিভের হাজার হাজার শিশুকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির সময়ও নিরাপদ, ব্যক্তিগত শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে।’
অবশ্য এ স্কুলটি ঠিক কবে নাগাদ চালু হবে সে সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেননি ইহর তেরেখভ। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘বাজেট থেকে তহবিলের অভাব সত্ত্বেও’ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সময়কালে শিক্ষার ব্যয় কমাবে না খারকিভের কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ান ভাষার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম মেডুজা মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, চলমান যুদ্ধের সময় সম্মুখসারির এলাকায় অবস্থিত ইউক্রেনীয় স্কুলগুলোকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। গেলো ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইউক্রেনে নতুন স্কুল বছর শুরু হয়েছে এবং এর আগেই খারকিভের মেট্রো স্টেশনগুলোতে প্রায় ৬০টি আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করেছে শহর কর্তৃপক্ষ।
এসব স্থানে এক হাজারেরও বেশি শিশু শিক্ষার্থী নিরাপদে পড়াশোনা করতে পারবে।
ইউক্রেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনজুড়ে ৩৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে এবং আরও প্রায় ৩ হাজার ৮০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, খারকিভ হচ্ছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। রুশ আগ্রাসন তথা যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এ শহরের জনসংখ্যা ছিল ১৪ লাখেরও বেশি।
খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ বলেছেন, গেলো ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার গোলাবর্ষণ এবং রকেট হামলার ফলে সেখানে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসি//