আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

মায়ের গলা চেপে ধরে মেয়ে, ছুরি চালায় সোহেল

গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামে গভীর জঙ্গল থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একমাত্র মেয়ে শেফালী ও তার সহকর্মী সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে শেফালী জানায়, মাকে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে বুকের ওপর বসে দুই হাত দিয়ে মাথা ও গলা টান দিয়ে ধরলে সোহেল ছুরি দিয়ে জবাই করে। পরে মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত হলে সহকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে তারা।

আজ শুক্রবার (৪ মার্চ) সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক মো. আমজাদ শেখ এ তথ্য জানান। এ সময় কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন ও শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

 
শেফালী ও সোহেল রানা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মা মিনারা বেগম (৫৭) শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। মাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার একমাত্র মেয়ে শেফালী (৩৫) গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খন্ড (পুকুরপাড়) গ্রামের মো. ফরিদের স্ত্রী। সহকর্মী সোহেল রানা (২৫) শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার খড়িয়াকাজিরচর গ্রামের মেরাজ উদ্দিনের ছেলে। শ্রীপুরের বিজিবেড গার্মেন্টসে শেফালী ও সোহেল চাকরি করতেন।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামের সাধুখার টেক এলাকার গভীর জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতনামা গলকাটা মরদেহ উদ্ধার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিনই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে মামলাটি তদন্ত করে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক মো. আমজাদ শেখ। পাশাপাশি র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআইর বিশেষজ্ঞ দল মরদেহের পরিচয় শনাক্ত ব্যর্থ হয়। ক্লুহীন মামলাটি পুলিশে বিভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে।

পুলিশ জানায়, মিনারা বেগমের বিয়ের পর জন্ম হয় একমাত্র মেয়ে শেফালীর। স্বামী আবু তাহের পরিবারিক কলহের জেরে শেফালীর জন্মের বছর কয়েক পর স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে অন্যত্র চলে যান। মিনারা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে শেফালীকে আদর যত্নে বড় করেন।

প্রায় ২০ বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে মো. ফরিদের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেন। বিয়ের পর শেফালী-ফরিদ দম্পতির ঘরে তিন ছেলে জন্ম হয়। শেফালী স্থানীয় বিজিমেড নামে একটি কারখানায় চাকরি ও স্বামী ফরিদ অটোরিকশা চালাতেন। সামান্য বিষয় নিয়ে শেফালী ও ফরিদের সংসারে প্রায়ই কলহ লেগে থাকতো। এ নিয়ে শেফালী তার মা মিনারা বেগমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে থাকতেন। মিনারা বেগমের সম্পদের মধ্যে বাবার রেখে যাওয়া ৯শতাংশ জমি সম্বল ছিল। মিনারা বেগমের অন্য কোনো ওয়ারিশ না থাকায়, জীবিত থাকা অবস্থায় জমিটি যাতে বিক্রি করতে না পারেন, তাই আট বছর আগে ওই জমিটি একমাত্র মেয়ে শেফালীকে উইল করে দেন। সবশেষ এই জমিটির জন্যই একমাত্র মেয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হলো মিনারা বেগমকে।

 

এসআই/
 


 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন