অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনাই ঘটেনি: ড. ইউনূসের আইনজীবী
এখানে জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ড. ইউনূসকে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। বললেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল আল মামুন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ড. ইউনূসকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনজীবী আব্দুল আল মামুন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল আল মামুন গণমাধ্যমে কথা বলেন। এসময় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসও উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও তার সঙ্গে ছিলেন এ আইনজীবী।
আব্দুল আল মামুন বলেন, ড. ইউনূসের নামে একটা মামলা করেছে দুদক। বলা হয়েছে শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা দেয়া হয়নি। এর ভেতরে শ্রমিকরা তাদের অগ্রিম হিসেবে ২৬ কোটি টাকা দাবি করেছেন। শ্রমিকরা বলেছেন ২০১৭ সাল থেকে আমরা মামলা করেছি। আইনজীবী কোনো ফি নেননি, বলেছেন আমরা মামলায় জিতলে আমাদের ৬ পারসেন্ট যারা পাবে তাদের অংশ তারা পাবে। এই শ্রমিকদের ফি তারা অ্যাডভান্স দাবি করেছেন। কারণ হাইকোর্টের অনুমোদনে, নির্দেশে আমরা এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে তাদের ৪৩৭ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছি, কারণ ওই টাকাটা শ্রমিকরা আবেদন করেন। ট্রেড ইউনিয়ন বলছে আমাদের টাকাটা অ্যাডভান্স দিতে হবে, না হলে আমাদের আইনজীবী কাজ করবেন না। তখন ট্রেড ইউনিয়ন আন্ডারটেকিং নিয়ে শ্রমিকদের ২৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এটা দুদক বলছে আপনারা জালিয়াতি করে তাদের সঙ্গে ‘ইয়ে’ করে নিয়ে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটা তো দুই পক্ষের সমঝোতা। টাকা দেয়া হয়েছে, শ্রমিকের সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যেটা হাইকোর্ট অনুমোদন করেছেন। সুতরাং এইটা তো জালিয়াতি হতে পারে না। শ্রমিকের প্রাপ্য টাকা দেয়া হয়েছে। এটা জালিয়াতি হতে পারে না। হাইকোর্ট নির্ধারণ করেছেন। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে সেটা দিয়ে দিয়েছি। এখানে জালিয়াতির কোনো প্রশ্ন নেই, এটা কিছু করার নেই। কারণ ৪৩৭ কোটি টাকা হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক ওইটা শ্রমিকের টাকা হয়ে গেছে। শ্রমিকদের টাকা থেকে তাদের অ্যাডভান্স দেয়া হয়েছে উকিলের ফি এবং মামলার খরচ তারা আগে নিয়েছে। এটা তো জালিয়াতি হয় না। জালিয়াতি হয় তখন যখন একপক্ষ আরেক পক্ষের স্বাক্ষর করে জাল করে কোনো ডকুমেন্টস করে। এখানে দুইপক্ষ উপস্থিত হয়ে চুক্তি করেছে। দুই পক্ষ যখন চুক্তি করে সেটা তো জাল হতে পারে না।
মামুন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ স্যার বলেছেন এগুলো কোনো অপরাধ না। এগুলো হয়েছে দুই পক্ষের সিদ্ধান্তে, কারণ সমাঝোতার জন্য শ্রম আইনেই বলা আছে। যেই অভিযোগটা এনেছে সেটা ভিত্তিহীন, এটা ভুল-বোঝাবুঝি, আপনারা এটা বুঝতে পারেননি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই ৪৩৭ কোটি টাকা শ্রমিকের, এটা তো আত্মসাতের বিষয় না। যেহেতু কোনো দোষ নেই। আমি চেয়ারম্যান। সমস্ত বোর্ডের সিদ্ধান্ত আমার কাছে আসে, সবাই যখন একমত হয় আমি স্বাক্ষর করে দেই। এখানে কোনো অনিয়ম নেই। সুতরাং এখানে ড. ইউনূসকে যে আসামি করা হয়েছে, এখানে কোনো মামলাই হয় না। চুক্তি হয়েছে দুই পক্ষের স্বাক্ষরে। এটা উদ্দেশ্যেমূলকভাবে করা হয়েছে। ওনাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে মিটিংয়ের আগেই টাকাগুলো সরানো হয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন মিটিংয়ের পরিবেশ ছিল না। কারণ সমাঝোতা চুক্তিতে নির্দেশ ছিল ৭ দিনের ভেতরে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে কোম্পানি এমুলেশনের জন্য পত্রিকায় ৯ তারিখে হাইকোর্ট নোটিশ পাবলিশড হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের কনফিডেন্স নেওয়ার জন্য ৮ তারিখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এটা আইনে টিকবে। কারণ ‘মিয়া বিবি রাজি, ক্যায়া করেগা কাজি।’ দুই পক্ষ সম্মত। এখানে অন্য কারও অধিকার নেই।
এখানে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই ষড়যন্ত্র আছে। যিনি অপরাধ করেননি তার বিরুদ্ধে যদি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়, কারও পক্ষ থেকে উসকানি ও প্ররোচনা থাকতে পারে। আমরা দুদকে আইনের সব ব্যাখ্যা দিয়েছি। ওনারা বলেছেন, এই সমঝোতা চুক্তিটা জাল। আমি বলি এটা জাল বলতে পারেন না, যখন দুই পক্ষ সম্মত, আবার হাইকোর্টের অনুমোদন প্রাপ্ত। সুতরাং এটা জাল না।
এর আগে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুদক কার্যালয়ে হাজির হন। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন দুদকের উপপরিচালক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বধীন একটি দল। সাড়ে ১১টার দিকে তলব শেষে ড. ইউনূস দুদক কার্যালয় থেকে বের বের হন।
গেলো ৩০ মে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি করে দুদক। মামলায় ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।