হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬০০, ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা
ইসরায়েলের কয়েকটি অঞ্চলে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় প্রায় ৬০০ ইসরায়েলি নিহত ও দুই হাজারের বেশি আহতের ঘটনা্য় দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে,দেশটির মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি যুদ্ধ ঘোষণার অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিসভার এই অনুমোদনের ফলে নেতানিয়াহু প্রশাসন এখন ‘উল্লেখযোগ্য সামরিক কর্মকাণ্ড’ চালাতে পারবেন।
এদিকে,ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস যোদ্ধাদের রকেট হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।শনিবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ শতাধিক ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরো ২ হাজার ৪৮ জন।
ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির প্রভাবশালী অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার কাছে ইসরায়েলি বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে হামাসের ব্যাপক হামলা ও হাজারো রকেট হামলায় নিহতের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক বলে কর্মকর্তারা অনুমান করছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামাসের হামলায় ২ হাজার ৪৮ জন আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং ৩ শ’ ৩০ জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে, কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী জাকা হামাসের হামলায় নিহতদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে সহায়তা করছে। এই গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৬ শতাধিক ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল লক্ষ্য করে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে হামাস। রকেট হামলার পর ইসরাইলের পাল্টা বিমান হামলা চালায়। এছাড়া কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক এবং ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) সৈন্যদের আটক করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
শনিবার (৭ অক্টোবর) গতকাল হামাসের হামলাটিও ছিল আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত। দিনটিও ছিল ইহুদিদের ছুটির দিন। ওই হামলার পর ইসরাইলও গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে। স্থল অভিযানেরও পরিকল্পনা করছে তারা।
বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার হামাসের হামলা আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত হলেও তা ছিল সুপরিকল্পিত। শনিবার রকেট হামলা চালানোর পাশাপাশি স্থলপথ, সমুদ্রপথ ও আকাশপথ ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়েন। তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসরাইলি শহর ও সেনাচৌকি অবরুদ্ধ করে রাখেন।তাদের অভিযানে বেশ কিছুসংখ্যক ইসরাইলি নিহত হন। কিছুসংখ্যক সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি নাগরিককে তারা জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছেন। তবে এ সংখ্যা ঠিক কত, তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।
এদিকে,ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়,ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৭৯০ জন।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এর জবাবে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,গাজা সীমান্ত সংলগ্ন ২২টি এলাকায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সেনাদের লড়াই চলছে।
শনিবার হামাসের এই হামলা ইসরায়েলের কাছে অনেকটা অপ্রত্যাশিত ছিল। হামলায় বব্যাপক প্রাণহানীসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার জরুরি অবস্থা জারি করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ি,রোববার সব স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
হামলার পর দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন,‘আজ (শনিবার)যা ঘটেছে, ইসরায়েলে এমনটা আগে ঘটেনি। তবে আমি এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, এমনটা আর কখনোই ঘটবে না। যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করে প্রতিহত করা হবে।’
অন্যদিকে, হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোওরি বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন হামাস সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ি আল আকসা মসজিদের অপবিত্রতা এবং কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে তারা নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গাজায় অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, গত বছর থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের শহরগুলোতে সামরিক অভিযান দেশটির সেনাবাহিনী। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ভূখন্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে রকেট হামলা চালায় হামাস। আর এর জবাবে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।