বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে আপত্তি, শীর্ষ পররাষ্ট্র কর্মকর্তার পদত্যাগ
ইসরায়েল ও গাজায় চলমান সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে আপত্তি জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা।
টানা দুই সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। চলমান এ সংঘাতে সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় আগ্রাসন চালাতে ইসরায়েলে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহ করার পাশাপাশি দেশটি বিমানবাহী রণতরীও পাঠিয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে।
আর এরইমধ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জোশ পল নামের একজন কর্মকর্তা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের যে বিভাগটি বিদেশে অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে কাজ করে, পদত্যাগকৃত ওই কর্মকর্তা সেই বিভাগেই কাজ করতেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায় ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি শক্তির কাছে অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে কাজ করা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা ইসরায়েল ও গাজায় চলমান সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে আপত্তি জানিয়ে বুধবার পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগকৃত ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলকে আরও মার্কিন সামরিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি তিনি সমর্থন করতে পারবেন না। এছাড়া চলমান গাজা সংঘাতে বাইডেন প্রশাসন যেভাবে এগিয়ে গেছে সেটিকে ‘বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব’-এর ওপর ভিত্তি করে ‘আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বুধবার (১৮ অক্টোবর) পদত্যাগ করা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তার নাম জোশ পল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে কংগ্রেসনাল এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ছিলেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের এ বিভাগটি বিদেশে অস্ত্র স্থানান্তর ও সরবরাহের কাজ পরিচালনা করে থাকে।
[caption id="attachment_194292" align="alignnone" width="1024"] মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা জোশ পল[/caption]
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের জোরালো সমর্থনের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ যে অস্বস্তি রয়েছে, জোশ পলের এই পদত্যাগ আসলে সেটিকেই সামনে এনেছে। যদিও এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল।
জোশ পল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে কংগ্রেসনাল এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হিসেবে ১১ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। তিনি বলছেন, তিনি এমন একটি চাকরি চালিয়ে যেতে পারছেন না যা ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের প্রাণহানির জন্য অবদান রাখছে।
এক সাক্ষাৎকারে জোশ পল বলেন, ‘নজিরবিহীন হামলায় হামাস যা করেছে তার ভয়াবহতা অনেক বেশি। তাই আমি সম্ভাব্য ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া বা চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের মাত্রাকে ভয় করি। আমি ইসরায়েলি সরকারের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকার করি। তবে সেই অধিকারকে স্বীকার করতে গিয়ে কত ফিলিস্তিনি শিশুকে মারা যেতে হবে তা নিয়েই আমার প্রশ্ন।’
পল বলেন, ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিপুল সামরিক সহায়তা আসলে কার্যকরভাবে তেল আবিবকে সেই গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে যে, তারা গাজায় যা ইচ্ছা সেটাই করতে পারে। আর সেই কাজে বিপুল পরিমাণ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারালেও সে বিষয়ে ইসরায়েলের কোনও চিন্তা নেই। ইসরায়েলি সরকার বলেছে, তারা হামাসকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে এবং গাজা শহর ও উত্তর গাজার বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। যদিও এটি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, জোশ পলের পদত্যাগের বিষয়ে কোনও ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। অবশ্য ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ জন্য আঞ্চলিক সমর্থন জোগাড়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কার্যত চষে বেড়িয়েছেন।
পল বলেছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টে সামরিক সহায়তা নিয়ে কাজ করার সময় তিনি অন্যান্য কিছু বিষয়ে বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সর্বদা মনে করতেন- তিনি ‘বিষয়গুলোকে সঠিক দিকে নিয়ে যেতে পারবেন’।
তবে গাজায় হামলার জন্য ইসরায়েলে সামরিক সহায়তা পাঠানো নিয়ে এবার তিনি আর সেটি পারেননি। আর এটিই তার পদত্যাগের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল বলে জানান জোশ পল।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭৮ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে এবং স্কুল ও হাসপাতালের মতো স্থানেও হামলার ঘটনা ঘটছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা বলেছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪৭৮ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন মাত্রার আঘাতে ১২ হাজার ৬৫ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ।
এছাড়া হামলার শিকার শত শত ফিলিস্তিনি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলেও জানান তিনি।