গাজায় নিহত মোট ৭০২৮, ইসরায়েলে ১৪০৫
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের ২০তম দিন বৃহস্পতিবারও বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।এতে শুরু থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর)পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৭ হাজার ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে।এদের মধ্যে ২ হাজার ৯১৩ জন শিশু,১ হাজার ৭০৯ জন নারী ও ৩৯৭ জন বয়স্ক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরো ১৭ হাজার ৪০০ জন। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে,বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন জানিয়েছে,হামাসের হামলায় বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর)পর্যন্ত নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা ১ হাজার ৪০৫ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর ৩০৮ সৈন্য ও ৫৮ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।এছাড়া হামাসের অব্যাহত হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫ হাজারের বেশি মানুষ।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ২০তম দিনে আরা বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।পাশাপাশি নতুন খবরও পাওয়া গেছে। বায়ান্ন টিভির পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
মস্কোয় হামাস প্রতিনিধি দল:গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ার রাজধানী মস্কো সফর করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের একটি প্রতিনিধি দল।রাশিয়ার সরকার নিয়ন্তিত গণমাধ্যম আরআইএ জানায়,হামাসের সিনিয়র সদস্য আবু মারজুক এই প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।এদিকে,একই সময়ে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানিও মস্কো সফর করছেন বলে জানিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গাজায় ৫০ বন্দি নিহত:ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলায় গাজায় ইসরায়েলি বন্দিদের মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে হামাস এর কাশেম ব্রিগেড।এর আগে,সংঘাত শুরুর দিন হামাস ২২৪ জন ইসরায়েলিকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
‘গাজায় গণহত্যা চলছে’: অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলার ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনায় দেশটির কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধ নয় বরং গণহত্যা বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে যা হচ্ছে তা গুরুতর। কে দায়ী বা কারা ভুল সেটা আলোচনার বিষয় নয়। সমস্যাটা হচ্ছে এটা যুদ্ধ নয়, এটা গণহত্যা। কারণ এতে দুই হাজারের বেশি শিশু মারা গেছে। কোনো অপরাধ না করেও তারা ভুক্তভোগী।
আরব দেশগুলোর যৌথ বিবৃতি:গাজায় ইসরায়েল বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বেশ কয়েকটি আরব দেশ। যৌথ বিবৃতিতে বাহরাইন, মিশর, জর্ডান, কুয়েত, মরক্কো, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,আত্মরক্ষার অধিকার কোনোভাবেই আইন ভঙ্গ এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে উপেক্ষা করার ন্যায্যতা দেয় না।বিবৃতিতে গাজা উপত্যকায় প্রাণহানী ঘটানোসহ ওই এলাকার লোকজনকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি করছে বলে নিন্দা জানান আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ইসরায়েলকে সমর্থনকারী কূটনীতিকদের লিবিয়া ছাড়ার নির্দেশ: ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের লিবিয়া ছেড়ে নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সংসদ।লিবিয়ার সাবেক জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন বাহিনী এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এবং মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।লিবিয় পার্লামেন্ট এক বিবৃতিতে জানায়,আমরা দাবি করছি যেসব রাষ্ট্র ইহুদিবাদী সত্তাকে তার অপরাধযজ্ঞে সমর্থন যোগায় তাদের রাষ্ট্রদূতদের অবিলম্বে লিবিয়া ত্যাগ করতে হবে।
পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব আটকে দিলো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া:গাজায় হামলা বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে পরপর উত্থাপিত দুটি প্রস্তাব বাতিল হয়েছে। ফলে গাজায় রক্তপাত বন্ধের লক্ষ্যে আনিত কোনো প্রস্তাবই পাস করা যায়নি।
স্থানীয় সময় বুধবার বৈঠকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। ওই প্রস্তাবে ‘যুদ্ধবিরতি’র কথা না বলা এবং ‘ভবিষ্যত হামলার বিষয়ে সবুজসংকেত’ দেওয়ার অভিযোগে বিরোধিতা করে ভেটো দেয় রাশিয়া ও চীন। অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।
পরবর্তীতে এরপর গাজায় অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতির’ দাবি জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরেকটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এ প্রস্তাবে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। পক্ষে ভোট দেয় রাশিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও গ্যাবন।