আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

কালিয়াকৈরে পুলিশ বক্সে আগুন, ফাঁড়ি ও হাসপাতালে ভাংচুর

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক, সফিপুর ও পল্লীবিদ্যুৎ সহ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক শ্রমিক বিক্ষোভে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকেরা নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। আট দিন ধরে শ্রমিকদের অসন্তোষের কারণে আজ থেকে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ থাকলেও আজ সকালে কালিয়াকৈরে বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

গেলো ২২ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা অষ্টম দিনের মতো কালিয়াকৈরে আন্দোলন চলছে আজ। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকা। ফলে সকাল থেকেই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল কলেজসহ নানা কাজে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে টানা অষ্টম দিনের মতো মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের চলমান বিক্ষোভ থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করা হয়েছে। উত্তেজিত শ্রমিকেরা ফাঁড়ির ফটক, কার্যালয়ের কাচ ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেছেন। অপর দিকে সফিপুর এলাকায় এক সাংবাদিকের অফিসের সকল সিসি ক্যামেরা ও অফিস ভাংচুর করেছে বলে জানা গেছে৷

মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে করে দেয় আন্দোলনরত শ্রমিকরা। এদিকে সফিপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সফিপুর এলাকায় তানহা হেলথ কেয়ার নামে একটি হাসপাতালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করেন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সফিপুরে অবস্থিত একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আরো জানা গেছে, ওয়ালটন শোরুম ও একটি পিকআপ ভ্যানেও আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। অসংখ্য  দোকানপাট ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ সহ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

আবার এদিকে, বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধে কালিয়াকৈরে তেমন কোন প্রভাব চোখে পড়েনি। এতে, কালিয়াকৈরে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে অবরোধের প্রথম দিন। অবরোধের মধ্যে স্বল্প পরিমাণ যানবাহন চলাচল করলেও শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সেগুলোর চলাচলও বন্ধ আছে। অবরোধ পালনে ভোর বেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একটি মিছিল ছাড়া আর তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। অবরোধের বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর এক অংশের নেতাকর্মীরা কালিয়াকৈর বাজারসহ বাইপাস এলাকা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বিক্ষোভ চলাকালে কালিয়াকৈরের ইউএনও-পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিক সহ অনেকেই একটি গোডাউনে অবরুদ্ধ অবস্থায় আটকা পড়ে ছিলো। সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখলেই ইট-পাটকেল ছুড়ছে শ্রমিকরা। ইতোমধ্যেই দুইজনের মোবাইল ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি করলেও  পিছু হটেনি শ্রমিকরা। ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল দেখলে আরো বেশি ফুসলে উঠছে তারা। পরে এক পর্যায়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় কিছুটা নিয়ন্ত্রেনে আনা হয়েছে শ্রমিকদের।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, কয়েক হাজার শ্রমিক মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছিল। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা চালিয়ে শ্রমিকদের সরানো হয়েছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, আজ সকাল থেকে মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ- ২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, গাজীপুরের সফিপুর, মৌচাক, পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন চলছে। তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ভাঙচুর করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন