আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

যে মসজিদে ৮৮ বছর পর তারাবির সুযোগ পেল মুসল্লিরা

প্রায় ৮৮ বছর পর তুরস্কের আয়া সোফিয়া মসজিদে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসছে শুক্রবার (১ এপ্রিল) ওই মসজিদে প্রথম তারাবি অনুষ্ঠিত হবে।

আসছে পবিত্র রমজানের পুরো মাস জুড়েই এখানে নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে আয়া সোফিয়াকে। জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

২০২০ সালের ২৪ জুলাই নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য খুলে দেয়া হলেও করোনা মহামারি শুরুর পর স্বাস্থ্যবিধির অংশ হিসেবে গত দুই বছর ওই মসজিদে তারাবি আদায় করা যায়নি। ফলে মুসল্লিরা অন্য সময় নামাজ আদায় করলেও তারাবি নামাজ আদায়ের সুযোগ পাননি।

জানা গেছে, এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা থেকে মসজিদ, পরে জাদুঘরে রূপান্তরিত হওয়া দেড় হাজার বছরের পুরোনো মসজিদ এই আয়া সোফিয়া। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের প্রধান গির্জা (ক্যাথেড্রাল) হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েক শতাব্দী পর অটোমান শাসকরা এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। 

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি সরকার।

১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো জাদুঘর । ২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের আদালত আয়া সোফিয়াকে জাদুঘরের মর্যাদা বাতিল করে মসজিদে রূপান্তরের আদেশ দেন। মসজিদ ছাড়া অন্যকিছু হিসেবে এটির ব্যবহারকে অবৈধ বলেও জানান আদালত।

এরপর দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে এই স্থাপনাকে মসজিদে রূপান্তরে আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

উল্লেখ্য, এটি স্থাপন করা হয়েছিল মূলত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে। এই স্থাপনাটি অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে স্থাপনের পর থেকে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। এর এটিকে ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তর করা হয় ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে, যা ১২৬১ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। 

তারপর এটি পুনরায় অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তর করা হয়, যার মেয়াদকাল ১২৬১-১৪৫৩ সাল পর্যন্ত। তবে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ফতেহ সুলতান মুহাম্মদের ঐতিহাসিক কন্স্টান্টিনোপল জয়ের মাধ্যমে তুরস্ক মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। 

এরপর এটিকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। যার নতুন নামকরণ হয় ‘ইম্পিরিয়াল মসজিদ’ যা প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী হয়। বর্তমানে তুরস্কের প্রধান মসজিদ সুলতান আহমেদ মসজিদ, যা ‘ব্লু মসজিদ’ নামে পরিচিত। যা স্থাপিত হয় ১৬১৬ সালে। তবে এই মসজিদ স্থাপনের পূর্বে ‘ইম্পিরিয়াল মসজিদ’-ই ছিল তুরস্কের প্রধান মসজিদ।

এই স্থাপনাটি ১৯৩৫ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক যাদুঘরে রূপান্তর করেন। ২০২০ সালে আদালতের রায়ের পর এটিকে পুনরায় মসজিদে রুপান্তরের কার্যক্রম গ্ৰহণ করা হয়েছে।

মসজিদে রূপান্তরের পর এর দেয়ালে মার্বেল পাথরে অঙ্কিত যীশু খ্রিস্টের অনেক গুলো ছবি সিমেন্ট দিয়ে মুছে দেয়া হয়। ছবিগুলো প্রায় ৫০০ বছরের জন্য সিমেন্টের নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই স্থাপনাটিকে যাদুঘরে রূপান্তরের পর ছবিগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়।

এছাড়া এই স্থাপনায় নতুন নিয়ম প্রবর্তন হয়। প্রধান নিয়মটি হল, ‘এই স্থাপনার মূল অংশ বা হলরুম ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, সেটি মুসলিম অথবা খ্রিস্টান ধর্ম উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। 
তবে এই স্থাপনার উভয় ধর্মের জন্য আলাদা সংরক্ষিত জায়গা রয়েছে। অর্থাৎ এই কমপ্লেক্সটিতে একটি মসজিদ ও একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। যা শুধুমাত্র যাদুঘরের কর্মচারী কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত।

৩১ মার্চ ২০১৮, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান কুরআন তিলাওয়াত করে ফতেহ সুলতান মুহাম্মদসহ আয়া সোফিয়ার জন্য কাজ করা সকলের রুহের মাগফেরাতে মোনাজাত করেন এবং ১০ জুলাই

২০২০ সালের রোজ শুক্রবার তুরস্কের শীর্ষ আদালত এটাকে পুণরায় মসজিদে রূপান্তরের রায় ঘোষণা করেন। আদলতের রায়ের পর মসজিদে আজান দেয়া হয়েছে যা প্রায় ৮৬ বছর পর।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন