আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

করোনার টিকার খরচে সরকার-বেসরকারি হিসেবে বিশাল ফারাক

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের খরচের হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ পার্থক্য। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক রয়েছে। জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি।  

গেলো মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) 'করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ' শিরোনামে এক গবেষণা এ তথ্য প্রকাশ করে টিআইবি।

ওই সময় বলা হয়, করোনা ভ্যাকসিনের খরচ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হবার কথা নয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা

অথচ গেলো মার্চে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, কোভিড-১৯ টিকা ক্রয় এবং বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। টিকা ক্রয়ে বাংলাদেশের খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব টিকা কত দামে কেনা হয়েছে তার বিস্তারিত কখনোই তুলে ধরেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

যেহেতু সরকারের তরফ থেকে টিকার দাম সম্পর্কিত কোন তথ্য তুলে ধরা হয়নি, সেজন্য টিআইবি বিভিন্ন সূত্র থেকে টিকার দাম সম্পর্কিত তথ্য জোগাড় করেছে।

সেই তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণায় বলা হয়, টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাড়ে এগারো হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবার কথা নয়।

গত জুলাই মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলো টিকা প্রতি ব্যয় তিন হাজার টাকা।

আর টিআইবি বলছে, টিকা প্রতি খরচ সবোর্চ্চ খরচ হতে পারে ২২৫ টাকা।

টিআইবির গবেষক মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, কোভ্যাক্স রেডিনেস এন্ড ডেলিভারি ওয়ার্কিং গ্রুপ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর টিকার পরিচালন ব্যয় সম্পর্কে একটি মডেল দাঁড় করিয়েছে।
এই মডেলের মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে টিকা প্রতি খরচ কেমন হতে পারে।

জুলকারনাইন বলেন, এখানে বলা হয়েছে টিকা প্রদানের সঙ্গে অন্যান্য খরচ যেসমন টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ, টিকাকর্মী নিয়োগ এবং তাদের বেতন-ভাতাসহ সকল খরচ তিনটা বিষয়ের উপর তারা প্রাক্কলন করেছে।

তিনি আরও বলেন, টিকা কার্যক্রমের বিদ্যমান অবকাঠামো, জনবলের ব্যবহার এবং আউটরিচ কেন্দ্রের অনুপাত বিবেচনায় তারা প্রতি ডোজ টিকার ক্ষেত্রে পরিচালন ব্যয় ধরেছে ৭১ দশমিক ৪ টাকা থেকে ২২৪ দশমিক ৪ টাকা।

এদিকে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, টিকা ক্রয় এবং দেবার ক্ষেত্রে সরকার যে হিসেব দিয়েছে সেখানে স্বচ্ছতার ঘাটতি আছে। সরকার যেহেতু টিকা কার্যক্রমের খরচ নিয়ে বিস্তারিত এবং স্বচ্ছ হিসেব দেয়নি, সেজন্য তাদের নির্ভর করতে হয়েছে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রের উপর।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের যে কথা বলছেন তার তুলনায় বাস্তব ব্যয়, নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী অর্ধেকের মতো হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ঘাটতি বাস্তবে হয়েছে কিনা সেটি তাদের জানা নেই। যেহেতু সরকার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করছে না বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে সতের হাজার কোটি খরচ হয়েছে। এই তারতম্যের কারণ হচ্ছে, তথ্য প্রকাশে ঘাটতি এবং গোপনীয়তার সংস্কৃতি।

টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণে দ্বিধান্বিত ছিল। ৭৫ শতাংশ মানুষ পরিবার-আত্মীয় স্বজনের এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকে টিকা বিষয়ে জেনেছে। ৬৬ শতাংশ টিকা গ্রহীতাকে টাকার বিনিময়ে দোকান থেকে নিবন্ধন করতে হয়েছে।

টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন