আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

আল-আকসায় ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধের আহ্বান জানালো আরব লীগ

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ভেতরে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লীগ। একইসঙ্গে আরব দেশগুলোর এই জোটটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড মুসলিম অনুভূতির জন্য স্পষ্ট অপমান এবং এর ফলে ব্যাপক সংঘর্ষের সূত্রপাত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। পবিত্র আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে সম্প্রতি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী পবিত্র এই মসজিদের ভেতরে কয়েক দফায় অভিযান চালানোয় ঘটেছে সহিংসতার ঘটনাও।

ইসরায়েলের পুলিশ গত শুক্রবারের পর আজ (২২ এপ্রিল) আবারো ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদে হামলা চালিয়েছে।

কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, গত রোববারের অভিযানে কমপক্ষে ২ জন ফিলিস্তিনি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ (শুক্রবার) ভোরে ফজরের নামাজের সময় ইসরায়েলের পুলিশ আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। ঠিক ২ দিন আগে একই জায়গায় পরিচালিত এক অভিযানে ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করে তারা।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইহুদীরা যাতে তাদের পবিত্র স্থান নির্বিঘ্নে পরিদর্শন করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য রোববার মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে তারা। ফিলিস্তিনিরা মসজিদ প্রাঙ্গণের আশেপাশে ব্যারিকেড দিয়েছে এবং পাথর জমিয়ে রেখেছে বলেও দাবি করে কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিকে মসজিদের বাইরের খোলা প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেয়। কিন্তু তখনো ভেতরে কয়েক ডজন মানুষ ছিলেন।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ঘিরে উত্তেজনা চললেও আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগ এতোদিন নীরবই ছিল। তবে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ড ও সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে বৃহস্পতিবার নীরবতা ভাঙে সংগঠনটি।

আরব লীগ জানায়, জেরুজালেমের পুরনো শহরে মুসলমানদের ইবাদতের অধিকার ক্ষুণ্ন করছে ইসরায়েল। এর পাশাপাশি পুলিশি নিরাপত্তার মাধ্যমে উগ্র-জাতীয়তাবাদী ইহুদিদের পবিত্র এই স্থানে প্রবেশের সুযোগও করে দিচ্ছে দেশটি।

ফিলিস্তিন ও আল আকসার পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার জর্ডানের রাজধানী আম্মানে জরুরি বৈঠকে বসে আরব লীগ। বৈঠকে জেরুজালেমে ইসরায়েলের অবৈধ নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের পর জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট যে, আল আকসা এবং হারাম আল শরীফের পুরো এলাকাটি একমাত্র মুসলমানদের ইবাদত করার জায়গা।’

এদিকে আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত বলেছেন, বহু শতাব্দীর পুরনো একটি নীতি লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল। পুরনো এই নীতি অনুসারে, অমুসলিমরা আল-আকসা প্রাঙ্গণে যেতে পারে, কিন্তু তারা (অমুসলিমরা) সেখানে প্রার্থনা করতে পারবে না।

চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে কথা বলেছেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি। এছাড়া পবিত্র স্থানটিতে উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য গত বুধবার এই অঞ্চলে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথেও দেখা করেছেন তিনি।

আইমান সাফাদি বলেছেন, ইহুদি উপাসকদের আল-আকসায় প্রবেশ বন্ধ করা হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেছে ইসরায়েল।

উল্লেখ্য, মুসলিম ও ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীদের কাছেই ঐতিহাসিকভাবে আল আকসা মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। মুসলিমদের জন্য পবিত্র আল আকসা মসজিদটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। আর মসজিদ চত্বর মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবে পরিচিত।

অবশ্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। আর সেটি নিয়েই বহু যুগ ধরে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বন্দ্ব। ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচাইতে পবিত্র স্থান।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন