‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন’
আসন সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে জোরালো লড়াই। প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসা। নির্বাচন অবাধ,নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন,সার্ক ও জাপান পর্যবেক্ষক গ্রুপের তকমা পাওয়া। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। এসবই ছিলো ৭ম জাতীয় নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর তীব্র আন্দোলনের তোপে পদত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এরপরই তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারপ্রধান হন সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান।
সেই সরকারের সময় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ রেকর্ডসংখ্যক ৮১টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ২৮১জন স্বতন্ত্রসহ মোট ২ হাজার ৫শ’ ৭৪ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। সেবার মোট ভোটার ছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি। ২৫ হাজা্র ৯৫৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়ে ৪কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৮টি।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ৩৭ দশমিক চার চার শতাংশ ভোট পেয়ে ১৪৬টি আসনে জয়ী হয়। অন্যদিকে,বিএনপি পায় ৩৩ দশমিক ছয় শূন্য শতাংশ ভোট। আসন পায় ১১৬টি। ২৯৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে। তাদের থলিতে পড়ে ১৬ দশমিক চার শূণ্য শতাংশ ভোট।
অন্যদিকে, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসন পেলেও ৭ম জাতীয় নির্বাচনে আস পায় মাত্র ৩টি। এই দলটি ভোট পায় ৮ দশমিক ছয় এক শতাংশ। অন্য দলগুলোর মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট ও জাসদ একটি করে আসনে জয়ী হয়। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন একটি আসনে।
ওই নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি । সরকার গঠনের জন্য দরকার ছিল ১৫১টি আসন। জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর বিএনপির তরফ থেকে ফলাফল মেনে নেয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলন করে ১১১টি আসনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন দলটির তৎকালীন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদার। তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেন, নির্বাচনে ৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। কারচুপির কোন সুযোগ ছিল না।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সার্ক ও জাপানের পর্যবেক্ষক দল জানায়-নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট-এনডিআই নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ওই সময় বলেছিল-নির্বাচনের কারচুপির যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে সে সংক্রান্ত প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেনি।