ফেয়ার নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই- বলে সরে দাঁড়ালেন জাপা প্রার্থী
কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতা ও উদাসীনতা আমাদের নিকট মনকষ্টের কাজ। মানুষের জীবনে টাকা কোনো বিষয় না। স্নেহ, ভালোবাসা ও যোগাযোগ এটাই আসল। এর থেকে আমরা পুরোপুরিভাবেই কেন্দ্র থেকে বঞ্চিত। আমরা বারবার কেন্দ্রীয় নেতাদের মোবাইল করেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। তবুও আমরা নির্বাচন করলে নিহত বা আহতের শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে আমি এই নির্বাচন স্বেচ্ছায় সড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের মূল লক্ষ্য ফেয়ার নির্বাচন। এখানে ফেয়ার নির্বাচনের কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। কী কারণে এমন মন হচ্ছে- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, পেশীশক্তি ও কালো টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বলেন, আমার দলের নেতা, আমরা যাদের নিয়ন্ত্রণে চলি, সেই দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাহেব হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে আমাদের ২৮৩টা আসনের জায়গায় মাত্র ২৬টি আসন নিয়ে উনারা খুশি হয়ে পড়েছেন। আর ২৫৭টা আসনে আমরা কোথায় গেলাম, কী অবস্থা আমাদের আজকের দিন পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেতারা রাখেননি। আমি বারবার চেষ্টা করেছি আমাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। শুধুমাত্র দপ্তরে একজনকে পেয়েছি তিনি হলেন জহিরুদ্দিন সাহেব। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আপনারা নির্বাচন থেকে সরে যান। আপনারা নির্বাচন করবেন না। আপনাদের কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। আপনাদের দল কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, যার জন্য আমরা এই নির্বাচনে আসলাম অল অভার বাংলাদেশের ২৫৭ জন, আমরা কোন জায়গায় আছি, আমাদের মা-বাপ কে? তার কোনো অস্তিস্ত নাই। গতকালও দেখলাম জিএম কাদের একটা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তির সাথে নির্বাচনের মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে মুজিবুল হক চুন্নু তার নির্বাচনী পোস্টারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী বলেছেন। বরিশালের রুহুল আমিন হাওলাদারেরও একই পর্যায়ের বক্তব্য। তাহলে আমরা কোথায় গেলাম। এই ২৬ জন লোকের কাছে আমরা জিম্মি। শুধু আজ থেকে না, এই ২৬ জন সেই ৯০ সাল থেকে শুরু করে এ যাবত পর্যন্ত সকল সময় আমাদেরকে সিঁড়ি বানিয়ে আমাদের পিঠের ওপর ভর করে এই নির্বাচন পার হবার চেষ্টা করছেন। এদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এই নির্বাচনেও তারা কোটি কোটি টাকা পেয়েছে। এই ২৮৩ জন লোকের (প্রার্থী) জন্য কোটি কোটি টাকা তারা সরকারের থেকে পেয়েছে। টাকা পাওয়ার পরও কোনো প্রার্থীকেও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেনি।
সোহরাব হোসেন বলেন, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারে। সেখানে প্রতিদিন তারা এক কোটি টাকার ওপরে খরচ করছেন। এদের সঙ্গে পাল্লা দেয়া আমাদের অত্যন্ত কঠিন। আমার সব থেকে যে কষ্টটা আমার দলের নেতা বিশেষ করে মহাসচিব ও চেয়ারম্যান এদের যদি ন্যূনতম লজ্জাবোধ থাকতো তাহলে উচিত ছিল সরকারের সঙ্গে এই সমঝোতা না করে সকল কর্মীদেরকে নিয়ে ২৮৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। ২৬ জনকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলকে কোরবানি করা হয়েছে। জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু এবং ওই ২৬ জন যারা দলকে কোরবানি করেছে। আগামীতে জাতীয় পার্টি সারা দেশে কোনো জায়গায় টিকিয়ে রাখার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেই বাধ্য হয়ে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।
এএম/